বাউফলে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা দূষণ হচ্ছে পরিবেশ
- আপডেট সময় : ০৫:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৭৩
রানা সেরনিয়াবাত বরিশাল:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়ীয়া ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আশপাশের জমি থেকে মাটি কেটে ওই ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও চলছে ইটভাটা। তারপরও ভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রম চলছে। ‘ঐ ই ঈ’ নামের অবৈধ এই ইটভাটাটির অবস্থান পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ৯নং আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের মহাশ্রদ্ধী এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,দুই বছর আগে থানা কাউন্সিল সড়কের পাশে মহাশ্রদ্ধী এলাকায় প্রায় আট একর ফসলি জমিতে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়। এর মালিক বাউফল উপজেলার মাধবপুর ১নং ওয়ার্ডের আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ হানিফ উল্লহ। ইটভাটার কারণে আশপাশের জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গত বছর প্রায় ৫০ একর জমির আমন ধানে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। কোন প্রতিকার পাইনি বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন। আমরা অভিযোগ ও মামলা করে কোন বিচার পাবো না বলে বারবার হুমকি দিয়ে আসছে হানিফ উল্লহ টাকার জোরে এবং সরকারদলীয় নেতাদের কারণে গরিব অসহায় দরিদ্র বলে বিচার পাবনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইটভাটার পাশে ফসলি জমি। এসব জমিতে চাষ করা হয় ধান, আলু, মরিচ, ডালসহ বিভিন্ন ফসল।খননযন্ত্র ও ভেকু দিয়ে কাটা হচ্ছে ফসলি জমি গভীর করে কাটা হচ্ছে মাটি। ইটভাটার দখলে চলে গেছে কয়েকটি অসহায় দরিদ্র পরিবারের জমি পাশেই রাখা হয়েছে মাটি কাঠের লাকড়ি ও সোয়ামিল চলার সময় ধুলাবালুতে আচ্ছন্ন হয়ে যায় এলাকা। যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ভাটাটিতে ৩০-৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
ভাটার পাশেই জমি রয়েছে কৃষক আবু সাঈদ খান। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার জমি ও ঘরবাড়ি ইটের ভাটার পাশে হওয়ার কারণে আমার ঘর পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে ভিটা মাটি দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে ইটভাটার মালিক হানিফ ও তার ভাতিজা আরো অজ্ঞাত কয়েকজন ছিল। আমি থানায় অভিযোগ করার পরে কোন আইনগত ব্যবস্থা না পেয়ে কোটেরদারাস্ত হয়ে একটি মামলা দায়ের করি সি.আর.মামলা.নং ১৬/২০২৩ পেনাল কোড। এই ইটভাটার জন্য আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই এটি বন্ধ হোক।কিন্তু মালিকের কাছে আমরা অসহায়। আমাদের কথার কোনো দাম নাই।
আঃ রাজ্জাক তালুকদার তিনি বলেন, আমার জমি ইটেরভাটার ভিতরে ও আশেপাশে থাকার কারণে জোর করে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেয় আমি বাধা দিলে ইটের ভাটার মালিক হানিফ উল্লহসহ ৭ জন আমাকে অনেক মারপিট করে এবং আমার কাছে রক্ষিত টাকা পয়সা মোবাইল ঘড়ি আংটি চেন নিয়ে যায় ও আমার ফসলি জমিতে আমন ধনে বিষ প্রয়োগ করলে আমার ৪.৪৮.৫০০/-টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমি থানায় কোন প্রতিকার না পেয়ে কোটের দ্বারস্থ হয়ে একটি মামলা দায়ের করি, সি.আর নং৫৭০/২০২২ তারিখ। পেয়ারা বেগম আব্দুল করিম সিকদার সাথি বেগম তাদের ইটভাটায় জমি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
নুরিয়া সিনিয়র ডিগ্রী মাদ্রাসা প্রভাষক রহিম মাওলানা বলেন, ইটভাটার ধুলা বালি আর ধোঁয়ায় কারনে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা এলাকার অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এবং অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈকত হোসেন বলেন, কৃষিজমির পাশেই অবৈধভাবে ওই ইটভাটাটি গড়ে উঠেছে। এ কারণে এলাকার কৃষি আজ বিপর্যয়ের মুখে। কৃষিজমির পাশে ইটভাটা হতে পারে না।
ইটভাটার হানিফ উল্লহ বলেন,‘কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে সব কাগজপত্র পেয়ে যাব। আমার ইটভাটার ভিতরে কেউ জমি পেয়ে থাকলে এলাকায় সালিশ ব্যবস্থা রয়েছে কাগজপত্র নিয়ে আসুক আমি জমি দিয়ে দেবো।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল উপপরিচালক মোঃ হালিম মিয়া,ওই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। এটি পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষতি করছে। শিগগির এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-আমিন বলেন, ‘তদন্ত করে ওই ইটভাটার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।