রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো:
রাজশাহীতে টাকা চুরির অপবাদে দুই নির্মাণ শ্রমিককে অমানবিকভাবে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সাথে সমাবেশ থেকে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ রাজশাহী জেলা শাখা শ্রমিকদের হত্যার বিচার না হলে সারা দেশে কাজ বন্ধসহ শ্রমিকনেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইনসাব'র রাজশাহী জেলা শাখা রোববার (৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টায় নগরীর জয় বাংলা চত্বরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
নগরের গণকপাড়া মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়। প্রায় ৩ থেকে ৪শ নির্মাণশ্রমিকের অংশগ্রহণে মিছিলটি সাহেববাজার ঘুরে এসে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সেখানে সমাবেশ করেন তাঁরা।
শ্রমিকনেতা নবাব বলেন, শ্রমিক মানেই অবহেলার পাত্র নয়। এই নির্মাণ শ্রমিক আছে বলেই দেশের অবকাঠমোগত এত উন্নয়ন হয়েছে। অথচ একশ্রেণির মানুষ এই শ্রমিকদের মূল্যায়ন না করে নির্যাতন করছেন। শুধু নির্যাতন নয়, অমানসিক ও নির্যাতন করে মেরে ফেলছেন। আর নির্মাণশ্রমিকেরা বসে থাকবেন না। এখন থেকে ইট মারলে পাটকেল মারা হবে। এর বিকল্প নেই।
অন্যান্য নেতাকর্মীরা বলেন, প্রথমে পুলিশ ভাইদের ধন্যবাদ জানাই। পুলিশ ওই দুই নির্মাণ শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু, চুরির মিথ্যে অপবাদকারী ও নির্যাতনকারী মডার্ন ফুড কোম্পানির মালিক মালেককে এখনও গ্রেপ্তার করেননি পুলিশ। কেন পারেননি তা জানতে চাই। শ্রমিক চুরি করে না। তাঁরা কাজ করে টাকা উপার্জন করে। যদি চুরি করতো তাহলে তাঁরা কাজে যেতো না। গনমাধ্যমে দেখলাম, কখনও ৪ লাখ কখনও ১০ লাখ টাকার অপবাদ দেয়া হয়েছে আমাদের শ্রমিকদের ওপরে। আমরা এর বিচার চাই। নইলে সারা দেশে নির্মাণ কাজ বন্ধসহ অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীর সপুরা বিসিক শিল্প এলাকার এক বাড়ির ছাদে বেঁধে রেখে দুই নির্মাণ শ্রমিককে দিনভর নির্যাতন করা হয়। বাড়ির মালিক বিসিকের মডার্ন ফুড নামের একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আবদুল্লাহ। শ্রমিকেরা এই বাড়িতে কাজে গিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা চুরির অভিযোগে তাঁদের নির্যাতন করা হয়।
দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় তাঁদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুই শ্রমিকএত নির্যাতনের পরও টাকা চুরির স্বীকারোক্তি দেননি। রাত ৯টার দিকে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ দুই শ্রমিককে নির্যাতনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়।
এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে করেই দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় জরুরি বিভাগেই এক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। আরেকজন মারা যান ঘণ্টাখানেক পর। নিহত দুই শ্রমিক হলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার মগনিয়া গ্রামের মো. আতাউর (৪৫) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের
শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতান্নপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম রাজু (৩৫)। রাকিবুল নগরীর তেরোখাদিয়া ডাবতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এ ঘটনায় রাকিবুলের স্ত্রী সোমা খাতুন বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এর আগে দুই শ্রমিককে উদ্ধারের সময়ই চারজনকে আটক করে পুলিশ। পরে এজাহারে তাঁদের নাম এলে পুলিশ এ মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখায়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন বাড়ির মালিক মো. আবদুল্লাহ (৩৮), আবদুল্লাহের শ্বশুর মাসুম রেজা (৫০), চাচাতো শ্যালক মঈন উদ্দিন (১৯) এবং কর্মচারী মো. ইমরান (২১)। গত শুক্রবার বিকালে পুলিশ তাঁদের আদালতে তোলে। তখন তাঁরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান।
এসকে মাল্টিমিডিয়া থেকে প্রকাশিত "প্রতিদিনের নিউজ ডটকম" হেড অফিস: ৫৩/এ নয়া পল্টন এক্সটেনশন রোড ঢাকা-১২০০। মোবাইল ০১৯৩০ ১৭২ ৫২০, ০১৩১৪ ১৬৮ ৬৪৪ । আঞ্চলিক অফিস: হাজী রজ্জব আলী সুপার মার্কেট (নিচ তলা) চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। Email:protidinernews24@gmail
সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না