খুলনায় ১০৭ প্রতিষ্ঠানের পতিত জমিতে এখন সবুজ বিপ্লব
- আপডেট সময় : ০৭:৩৮:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৬১
আবু বকর সিদ্দিক, খুলনা:
টমেটো, সরিষা, পেঁয়াজ, ভুট্টা, মসলাসহ নানা জাতের শাকসবজি এখন উৎপাদন হচ্ছে খুলনার বন্ধ শিল্পকারখানা, বিভিন্ন সরকারি অফিস, রাস্তার পাশ ও স্কুল-কলেজের চত্বরে। ফলছে নানা রকম ফুল-ফল। শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, সরকারি দপ্তরের কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিচর্যায় অব্যবহৃত আড়াই হেক্টর জমি এখন শস্য-শ্যামল জমিতে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সবজি, চাল- ডাল, আটা থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের দামও এখন আকাশচুম্বী। এই মন্দা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাদযোগ্য সব জমিতেই চাষ করতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই কথার সূত্র ধরেই খুলনার সরকারি অফিস চত্বর, পাটকল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সরকারি অফিসের চত্বরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় খুলনার ১০৭টি প্রতিষ্ঠানে এই চাষাবাদ চলছে। এতে উৎপাদিত ফসল প্রতিদিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে একটু হলেও রক্ষা করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, খুলনা মহানগরীসহ জেলার ১০৭টি প্রতিষ্ঠানে দুই দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে এই চাষাবাদ শুরু হয়েছে। উৎপাদন হবে প্রায় ৩ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ফসল। বন্ধ পাটকলগুলোর শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাষাবাদের কাজ করছেন। তাদের সার, বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার কর্মকর্তারা।
খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মহারাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের স্কুলের পাশে প্রতিষ্ঠানেরই অনেক পতিত জমি রয়েছে। যেখানে কোনোদিনও চাষাবাদ হয়নি। কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় এবার সেখানে ডাটা শাক, পেঁয়াজ, আলু রোপণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শীতেরও কিছু সবজি চাষ করা হয়েছে। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সবজি বাগান থেকে স্বল্পমূল্যে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্রিও করা হচ্ছে। খুলনার শিল্পাঞ্চল খালিশপুরের সবচেয়ে বড় পাটকল ক্রিসেন্ট জুটমিল। এই মিলের মধ্যে পতিত জমির পরিমাণ দুই হেক্টর। পাটকলটির আবাসিক এলাকার ফাঁকা জমিতে সূর্যমুখীর বীজ চাষ করা হয়েছে। অন্য জমিতে সরিষাসহ বিভিন্ন রবিশস্য লাগানোর কাজ চলছে।
পাটকল ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রানুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ক্রিসেন্ট জুটমিলে ছয় বিঘা, খালিশপুর জুটমিলে তিন বিঘা, দৌলতপুর ও প্লাটিনাম জুটমিলে দুই বিঘা, ইস্টার্নে ২০ শতক, আলিমে আড়াই বিঘা এবং স্টার জুটমিলের ১২ বিঘা জমি চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
এসব জমিতে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ধনেপাতাসহ বিভিন্ন সবজি, তেল ও মসলাজাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু স্টার জুটমিলের কিছু জমিতে বোরো ধান চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের আফিল, মহসীন ও অ্যাজাক্স জুটমিলের পতিত জমিতেও সবজি ও তেলজাতীয় শস্যের চাষ শুরু হয়েছে।
ক্রিসেন্ট জুটমিলের প্রকল্প প্রধান খান মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ফসল চাষের বিষয়টি মিলের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তারা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে প্রায় লাখ টাকার একটি তহবিল গঠন করেছেন। তা থেকেই চাষাবাদের কাজ চলছে। কেনা হচ্ছে সার-বীজ। উৎপাদিত ফসল তারা নিজেরাই কিনে নেবেন। তহবিল ঠিক থাকবে।
তিনি বলেন, পাটকলের আবাসিক এলাকার ছয় বিঘা জমিতে সবজি চাষ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি ১২ বিঘায় উন্নীত করা হবে। মিল চালু হলেও চাষাবাদে সমস্যা হবে না। এর বাইরে কারখানা এলাকায় ৩০০ পেঁপের চারা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এক হাজার চারা লাগানো হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাষাবাদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেও মাধ্যমে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উত্থাপন করা হয়। সভায় অনুমোদন পাওয়ার পর গত ১৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে পতিত জমিতে চাষের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এরপর তারা পাটকলের ভেতরে চাষ করতে রাজি হন। দুই মাস ধরে চাষের কাজ চলছে তিনি আরও বলেন, আমরা ট্রাক্টও দিয়ে জমি চাষ করে ফসল বোনার উপযোগী করে দিয়েছি। কিছু কিছু বীজ-সার আমরা দিচ্ছি। পাটকলের শ্রমিক- কর্মচারীরাই পরিচর্যা করছে।