রংপুরে বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল ৮০ শতাংশ প্রসব হচ্ছে অহেতুক সিজারে
- আপডেট সময় : ১১:০২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৭৪
রংপুর সংবাদদাতা:
রংপুরে প্রায় দুই কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতাল কে ঘিরে ধাপ এলাকায় গড়ে উঠছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল। এই সব ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলো তে গর্বতী মহিলা দের কে বেশি মুনাফার জন্য এক শ্রেনীর লোভী ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্মকর্তা রোগীর স্বজনদের ভুল ভাল পরামর্শ দিয়ে অহেতুক সিজারের জন্য বাধ্য করেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলে মা এবং সন্তান দু’জনই পড়েন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
কারণ, এসময় বিভিন্ন ধরনের চেতনা এবং বেদনানাশক ওষুধ দেওয়া হয় মাকে। যার প্রভাব পড়ে মা এবং নবজাতকের ওপর। আবার অস্ত্রোপচারে গর্ভ নষ্টের ঝুঁকি বাড়ে, বাড়ে শিশুমৃত্যুর হার, মায়ের বুকের দুধ শুরু করাতেও সমস্যা হয়।আর অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের সঙ্গে অপরিণত শিশু জন্মেরও সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
এসব সত্ত্বেও দেশে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা ব্যাপকহাওে বেড়েছে।এভাবেই সিজারিয়ান পরিণত হয়েছে হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোর বড় ব্যবসাক্ষেত্রে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রসূতি মা গেলেই তার পরিবারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে অপারেশন করানোর।
রংপুরে সরকারি হাসপাতালে ২৩ শতাংশের বেশি সন্তান প্রসব হচ্ছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে এই হার ৮০ শতাংশ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এই ৮০ ভাগ মায়ের অপারেশন কী মেডিকেলে বর্ণিত ক্রাইটেরিয়াতে হয়? বিশেষ করে পরিবারগুলো যতো ধনী হচ্ছে, ততো বাড়ছে সিজারিয়ানের হার।
মেডিকেল ইন্ডিকেশন মেনে চললে ধনী-দরিদ্র সবক্ষেত্রেই এই হার এক হতো। আর একটি নির্দিষ্টসংখ্যক সিজারিয়ান হচ্ছে ‘আননেসেসারি (অপ্রয়োজনীয়) জোর করে কেটে-কুটে বের করে,কেন যে চিকিৎসকরা এটা করেন তাইতো বুঝি না।
আমেরিকার মতো দেশেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের চিকিৎসকরা অপারেশন ছাড়া কথাই বলেন না। ক্রিটিক্যাল কিছু না হলে সিজারের কথা আমেরিকানরা ভাবেন না, আর আমরা একটা গরীব দেশে সুস্থ মানুষের পেট কেটে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেই। আমাদের দেশের চিকিৎসকদের পরিকল্পনাই থাকে অপারেশন করার। অথচ স্বাভাবিক প্রসবে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে রংপুরে প্রায় তিন শতাধিক প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল আছে মোটামুটি সবকটি ক্লিনিক ঘুরে দেখেছি কোথাও নরমাল ডেলিভারির কথা চিন্তা করে না সিজার করতেই হবে। ঠিক এভাবে কথা বলে গাইনী ডাক্তার রা। আপনি নরমাল ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করবেন, আপনি চাকরি করেন, জার্নি করেন, আপনার প্রয়োজনের সময় আমি কোথায় থাকি তারও ঠিক নেই, আপনিতো আমার কাছেই করবেন-তার চেয়ে আমি ডেট দিয়ে দিলাম-অপারেশন করে ফেলবো, এসব নানা কথা বলে রোগীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতেন। একজন নারী যখন মা হতে চলেন তখন তিনি মানসিকভাবেই দুর্বল থাকেন। তাই রোগী ও তার স্বজনরা চিকিৎসকের কথার বাইরে কিছু চিন্তাই করতে পারেন না। কাজেই সিজার করতে হয়।