০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৫:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৬

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মো. আব্দুস সালাম

তুরাগ তীরে প্রতীক্ষিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ শেষ হচ্ছে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে আগামী শুক্রবার থেকে। করোনার কারণে তিন বছর বন্ধ থাকার পর এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের ঢল নেমেছে যথারীতি। এটি বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আয়োজন।

দেশ-বিদেশের সমবেত লাখ লাখ মুসল্লির ইবাদত-বন্দেগিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বড় বড় ইসলামী পণ্ডিতগণ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় বয়ান করেন। বিশ্বমানবের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ গণজমায়েত।

তিরিশের দশকে লক্ষ্মীর হজরত মওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও এর বিস্তার ঘটে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব ইজতেমার উদ্ভব। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে বর্তমান কাকরাইল মসজিদ-সংলগ্ন মাঠে। বিশ^ ইজতেমার মহতী সমাবেশ মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখছে।

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া একটি বিশেষ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা এবং বিশিষ্টজনরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেছেন। এবারও এমনটিই প্রত্যাশিত। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশটি সম্পন্ন হয়ে আসছে। অবশ্য লাখ লাখ মুসল্লির ইজতেমায় যাতায়াত নিয়ে কিছু ভোগান্তি থেকেই যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমাস্থলে যাতায়াতে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তরফে ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। যাতায়াত ও নিরাপত্তা ছাড়াও এই বিশাল জমায়েতে স্বাস্থ্যসেবা, পানি-বিদ্যুৎ-স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকারের পক্ষ থেকে উল্লিখিত সবরকম সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারে শীতে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাদের সুস্থতার লক্ষ্যে সরকার সতর্কতামূলক বার্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিদেশ থেকে যেসব মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন, তারা আমাদের মেহমান। তারা যেন কোনো বিড়ম্বনার শিকার না হন, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ইজতেমার একটি সামাজিক জনকল্যাণমূলক দিকও রয়েছে। সেটি হলো যৌতুকবিহীন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এবারও এই আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হচ্ছে বর-কনের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে।

বিশ্ব ইজতেমার জনপ্রিয়তা এখন এতটাই যে, অনেক রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল আখেরি মোনাজাতের অনুষ্ঠান লাইভ তথা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা কাজ করে যে, এখানে যারা অংশগ্রহণ করেন, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে একটি আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় হানাহানি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন ইসলামের শান্তির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই বৃহৎ সম্মেলনটি গুরুত্ববহ অবশ্যই।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

আপডেট সময় : ০৫:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মো. আব্দুস সালাম

তুরাগ তীরে প্রতীক্ষিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ শেষ হচ্ছে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে আগামী শুক্রবার থেকে। করোনার কারণে তিন বছর বন্ধ থাকার পর এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের ঢল নেমেছে যথারীতি। এটি বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আয়োজন।

দেশ-বিদেশের সমবেত লাখ লাখ মুসল্লির ইবাদত-বন্দেগিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বড় বড় ইসলামী পণ্ডিতগণ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় বয়ান করেন। বিশ্বমানবের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ গণজমায়েত।

তিরিশের দশকে লক্ষ্মীর হজরত মওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও এর বিস্তার ঘটে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব ইজতেমার উদ্ভব। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে বর্তমান কাকরাইল মসজিদ-সংলগ্ন মাঠে। বিশ^ ইজতেমার মহতী সমাবেশ মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখছে।

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া একটি বিশেষ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা এবং বিশিষ্টজনরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেছেন। এবারও এমনটিই প্রত্যাশিত। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশটি সম্পন্ন হয়ে আসছে। অবশ্য লাখ লাখ মুসল্লির ইজতেমায় যাতায়াত নিয়ে কিছু ভোগান্তি থেকেই যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমাস্থলে যাতায়াতে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তরফে ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। যাতায়াত ও নিরাপত্তা ছাড়াও এই বিশাল জমায়েতে স্বাস্থ্যসেবা, পানি-বিদ্যুৎ-স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকারের পক্ষ থেকে উল্লিখিত সবরকম সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবারে শীতে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাদের সুস্থতার লক্ষ্যে সরকার সতর্কতামূলক বার্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিদেশ থেকে যেসব মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন, তারা আমাদের মেহমান। তারা যেন কোনো বিড়ম্বনার শিকার না হন, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ইজতেমার একটি সামাজিক জনকল্যাণমূলক দিকও রয়েছে। সেটি হলো যৌতুকবিহীন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এবারও এই আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হচ্ছে বর-কনের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে।

বিশ্ব ইজতেমার জনপ্রিয়তা এখন এতটাই যে, অনেক রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল আখেরি মোনাজাতের অনুষ্ঠান লাইভ তথা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা কাজ করে যে, এখানে যারা অংশগ্রহণ করেন, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে একটি আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় হানাহানি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন ইসলামের শান্তির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই বৃহৎ সম্মেলনটি গুরুত্ববহ অবশ্যই।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন