বাগেরহাটে কলেজের প্রভাষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাথের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ১১:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২
- / ৬৬
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ-
বাগেরহাটের কচুয়ায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা কল্যান ট্রাষ্ট্রের ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাথের অভিযোগ উঠেছে। বাগেরহাটের কচুয়া সরকারি শহিদ শেখ আবু নাসের মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক অনুপ কুমার পালের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ করেছে কয়েক জন ছাত্রী। অভিযোগের পর বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন তথ্য। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারে হস্তক্ষেপে ১২ জন ছাত্রী ফেরৎ পেয়েছে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৯শত টাকা। সহকারী অধ্যাপক মৃনাল কান্তি সাহাকে প্রধান করে প্রভাষক ইকবাল হোসেন ও সমির কান্তি বাড়ৈর নাম উল্লেখ করে তিন সদস্য বিশিষ্ট দায় সারা তদন্ত কমিটি করেছেন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হর প্রসাদ মিস্ত্রী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হর প্রসাদ মিস্ত্রী ও প্রভাষক অনুপ কুমার পাল যোগসাযোসে এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। উপবৃত্তির আবেদনে প্রতি ছাত্রীর নিকট থেকে নেওয়া হয়েছে ২ শত টাকা। ২০২০-২০২১একাদশ শ্রেনীতে ভর্তির পরই ২১৩ ছাত্রীর নিকট থেকে আবেদন খরচ ২ শত টাকাসহ জন্মনিবন্ধন,মোবাইল নাম্বরসহ মোবাইল ব্যাংকিং ও পিন কোড সহ সিমকার্ড জমা নেয়। এর পর ১৮৮ জনের নামে উপবৃত্তির তালিকা প্রকাশ সহ টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে কয়েক জন ছাত্রী অভিযুক্ত প্রভাষক কর্র্র্তৃক টাকা উত্তোলোনের বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে জানালে তার হস্তক্ষেপে ওই প্রভাষক নিজেই উত্তোলন কৃত টাকার মধ্যহতে (গত ২৯-০৬-২২) তারিখ চার জন ছাত্রীর ৩৬,৬০০ টাকা (৩-৭-২২) তারিখ চার জন ছাত্রীর ৩৯,৬০০ টাকা,(৫-৭-২২)তারিখ তিন জন ছাত্রীর ১৭,৯০০ টাকা ফেরত দিয়েছেন।
সহকারী অধ্যাপক আশুতোষ হালদার সহ কয়েক জনে জানান, অধ্যক্ষ হর প্রসাদ মিস্ত্রী কলেজের উপবৃত্তি সহ সকল প্রকার অনলাইনের কাজ প্রভাষক অনুপ কুমার পালকে দিয়ে করিয়ে থাকেন। এই সুবাদে অনুপ কুমার পাল ছাত্রীদের উপবৃত্তির অনলাইনে ফরম পূরনের জন্য প্রতি ছাত্রীর নিকট থেকে দুই শত টাকাসহ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নাম্বর ও পাসওয়ার্ড রেখে দেন। এমনকি কৌশলে অনেকের মোবাইল সিমও রেখেছেন। তাদের টাকা উত্তোলন করে নিজে হাতে রেখে বিভিন্ন কথা বলে অত্মসাৎ করে। এছাড়া ২০২১-২০২২ শিক্ষা বর্ষের ২৩৪ জন ছাত্রী ভর্তি হয়। এদের মধ্যে ২২৯ জন ছাত্রীর নামে উপবৃত্তির টাকা আশে। এদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রী টাকা পেয়েছে। বাকি ছাত্রীদেও প্রাপ্য ১২ লক্ষাধীক টাকা প্রভাষক অনুপ কুমার পাল নিজেই উত্তোলন করেছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত প্রভাষক অনুপ কুমার পাল বলেন, উপবৃত্তির সর্ম্পকে এমুহুর্তে কিছু বলতে
পারছি না সকল তথ্য অধ্যক্ষ স্যার বলতে পারবেন। ছাত্রীদের নিকট থেকে উপবৃত্তির আবেদনের জন্য কোন টাকা নেওয়া হয় না। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের কোন সুযোগ আছে কি? এছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সামনে উত্তোলন কৃত টাকার মধ্যে হতে কয়েক জন ছাত্রীকে স্বাক্ষর করে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যপারে বলেন,শিক্ষা অফিসার কি লিখেছে তা সে জানেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ২০২১-২০২২ শিক্ষা বর্ষের কয়েক জন ছাত্রী জানান,তাদের নিকট থেকে উপবৃত্তির ফরম পূরনের জন্য তাদের নিকট থেকে দুই শত টাকা নেওয়া হয়েছে। এপর্যন্ত তারা কোন টাকা পায়নি। এছাড়া আরো এক জন ছাত্রী কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, তার পিতা দিন মজুর বর্তমানে কাজ না থাকায় সে অর্থের অভাবে কলেজে যেতে পারছে না। উপবৃত্তির টাকা পেলে উপকার হতো এবং কলেজে যেতে পারতো।
অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হর প্রসাদ মিস্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার আগের থেকেই কলেজের অন-লাইনের সকল কাজ প্রভাষক অনুপ কুমার পাল করে আসছেন অন্য কেউ এসব কাজ করতে পারে না। তাই তাকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। কত জন ছাত্রী উপবৃত্তি পেয়েছে তা অনুপ কুমার পাল বলতে পারবে, কারন সে কাজ করে। তাকে উপবৃত্তির আবেদনের জন্য পারিশ্রমিক বাবদ এক শত ৫০ টাকা নিতে বলেছি। কিন্তু সে দুই শত টাকা নিয়েছে। কয়েকজন ছাত্রীর টাকা উত্তোলন করেছিল সে টাকা আবার শিক্ষা অফিসারের সামইে ছাত্রীদের ফেরত দিয়েছে।
প্রভাষক ইকবাল হোসেন বলেন, প্রভাষক অনুপ পালের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যক্ষ স্যার
সহকারী অধ্যাপক মৃনাল সাহাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে আমাদের উপর তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করছি। কিন্তু আমি অনলাইন সম্পর্কে কিছু বুঝিনা প্রভাষক যা বলে তাই শুনছি দেখা যাক কি করা যায়।
এব্যাপরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন,গত জুন মাসে কচুয়া উপজেলায় যোগদানের পর সরকারি শহিদ শেখ আবু নাসের মহিলা ডিগ্রী কলেজের বেশ কিছু ছাত্রী আমার অফিসে অভিযোগ করে যে, তারা কোন উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না। উপবৃত্তি প্রকল্পের সফটওয়্যারে সার্চ দিয়ে দেখতে পাই অভিযোগকারীর অধিকাংশ ছাত্রীর নামে উপবৃত্তির টাকা প্রকল্প হতে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই টাকা ছাত্রীদের দেওয়া মোবাইল একাউন্টে না প্রবেশ করে অন্য অজানা কোন মোবাইল একাউন্টে ক্যাশইন হয়েছে। ওই নাম্বারে ফোন করলে সর্বদাই বন্ধ পাওয়া যায়। এই কাজ গুলি যেহেতু প্রভাষক অনুপ কুমার পাল করেছেন তাই তাকে দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা হয়। দায়িত্ব না নিলে তাকে দায়ী করা হবে বললে সে এক পর্যায়ে স্বীকার করেন এবং অভিযোগকারী ছাত্রীদেরকে আমার অফিসে ডেকে এনে ১২ জনের উপবৃত্তির টাকা বাবদ মোট এক লক্ষ পাঁচ হাজার নয়শত টাকা আমার উপস্থিতিতে প্রভাষক অনুপ কুমার পালের নিজ হাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের মাঝে ফেরত দেয়া হয় ও তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। এরূপ আরো অনেক শিক্ষার্থী এখনো অপেক্ষায় রয়েছে। প্রভাষক অনুপ কুমার পাল এখন আর কোন টাকা দিতে রাজী হচ্ছেন না। বিধায় অনেক শিক্ষার্থী বাববার কলেজে যাচ্ছে উপবৃত্তির টাকা পাবার আশায়। বিষয়টি তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার,বাগেরহাট মহোদয়কে লিখিতভাবে অবগত করেছেন।
এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম তারেক সুলতান বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। তবে এটা জেলা পর্যায়ের বিষয় আমার কাছে কোন তথ্য নেই। এটা জেলা থেকে ম্যানেজ হচ্ছে আমার কোন ষ্ট্রেটমেন্ট নেই।