হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনজীবন
- আপডেট সময় : ০১:২৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৫৫
মোঃ আব্দুস সালাম:
হিজড়াদের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের সীমাহীন নীরবতা ও অতিসহনশীল মনোভাবের কারণে এরা প্রশ্রয় পেতে পেতে অপ্রতিরোধ্য নরদানব হয়ে উঠেছে, দুর্বিনীত পরখাদকে পরিণত হয়েছে। ফলে এরা নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে এবং যাচ্ছেতাই করে বেড়ায়, যখন থানা বা অনুরূপ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানে এদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সচরাচর গ্রহণ করা হয় না কিংবা আপাত-গৃহীত হলেও, শেষ পর্যন্ত দেখে না। এরা জোরজুলুম করে পরের সম্পদ যেভাবে কেড়েকুড়ে নেয়, তাকে ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।
বর্তমানে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসাবেও কাজ করছে। বিবাদমান এক পক্ষের ভাড়াটে হয়ে দল বেঁধে এসে অন্য পক্ষের বউ ঠেঙানো, মেয়েলোক হেনস্তা করা বা বাড়িতে ঢুকে ঝামেলা করা হালে নতুন মাত্রা পেয়েছে। কাক্সিক্ষত মাত্রায় দাবীর টাকা (দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ন্যূনতম ৫০০০/ টাকা) না পেলে নবজাতককে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নাচিয়ে-ঊঁচিয়ে আচমকা আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলা, যা শিশুর সারাজীবনের জন্য চিরস্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ অবস্থায় আক্রান্ত পরিবারটি নিরুপায় হয়ে দাবীর টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয় অথবা বিতিকিচ্ছি গালিগালাজ হজম করে কিছুটা কম দিয়ে সেযাত্রা রেহাই পায়। দেখার কেউ নেই। এদের ‘ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়, জবানে কহতব্য নয়’ এমন চরম পর্যায়ের নির্লজ্জতা, ইতরামি, বেয়াদবি, কথায় কথায় বেআব্রু হওয়ার প্রবণতা ও জঘন্যরূপ অশ্রাব্য মুখখিস্তি জনপদের বাতাস ও পরিবেশকে দুষিত করছে প্রতিনিয়ত, যা একটি সভ্য সমাজ ও জাতির জন্য সহায়ক নয়, ‘সভ্য’-পরিচিতির পক্ষে অনুকূল নয়। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াও হিজড়া আছে, কিন্তু তারা তো এদের মত অসভ্য নয়। এরা এদের কুৎসিত আচরণের কারণে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি হারিয়েছে এবং স্বতঃস্ফূর্ত দানের হাত থেকে বঞ্চিত হয়ে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়াচ্ছে। মানুষের অন্তরে দীর্ঘদিনের তিক্ত হিজড়া-অভিজ্ঞতা যে হিজড়া-চিত্র অঙ্কন করেছে, সেখানে ‘ভদ্র হিজড়া’ বলে কিছু নেই। এখন মাদকের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে এমন ধারণা অমূলক নয়। এরা ‘লিঙ্গ প্রতিবন্ধী’। ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ’ বলে তামাম সৃষ্টিজগতে কিছু নেই, থাকতে পারে না। পরন্তু এই ধারণা কথিত ‘তৃতীয়’ ও ‘স্বাভাবিক’ পক্ষদ্বয়ের মাঝে লিঙ্গভেদে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপরপক্ষে ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটির মাঝে নিহিত আছে প্রতিবন্ধীদের প্রতি স্বাভাবিক সহানুভূতি। এমতে এদের লিঙ্গ-পরিচিতি পরিবর্তিত হওয়া উচিত। মানুষ ‘লিঙ্গ প্রতিবন্ধী’ হতেই পারে, কিন্তু ‘তৃতীয় লিঙ্গের জীব’ বলতে ভূত-প্রেত-ইলিয়ন কিছু ছাড়া আর কী বা বুঝায়। ভাষা ও নাম মানুষের মনোজগতে প্রভাব ফেলে। অতএব তা হওয়া চাই মার্জিত ও সুন্দর।
এদের চালচলন, হাবভাব, পোশাক-আশাক অস্বাভাবিক। লোকজন এদেরকে সর্বদা ভূত-দর্শন করে ও এড়িয়ে চলে। কি পুরুষ-বৈশিষ্ট্যের কি নারী-বৈশিষ্ট্যের সব হিজড়া নারীর বেশধারী। ধরা যাক পুরুষ-বৈশিষ্ট্যের এক হিজড়া, চেহারা-সুরতে পুরুষালী ভাব, মুখে গোঁফ-দাড়ির ছাপ; অথচ পরনে শাড়ি-ব্লাউজ, মাথায় খোঁপা, পায়ে নূপুর এমন বেখাপ্পা সাজে সজ্জিত, অস্বাভাবিক মূর্তিমন্ত, ভিন গ্রহের জীবরূপে আবির্ভূত, ত্রাস সঞ্চারক গোষ্ঠী সমাজে কখনো সাদরে স্বাগত-গৃহীত হতে পারে না। ফলে এরা সমাজ-বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় সমাজে এদের পুনর্বাসন সুদূরপরাহত।
শিক্ষাদীক্ষা ও সচেতনতার বিরাট অভাব। এক্ষেত্রে এদের ‘ভাল হয়ে যাওয়া’র জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। মুসলমানদের তালীমী ও তাবলীগী কাউন্সিলিং মসজিদের পেরিয়ে হিজড়াদের আস্তানায়ও প্রবেশ করা দরকার। কারণ ওরাও মানুষ। একদিন, শেষবিচারের দিন মহাপ্রভুর সামনে তদেরকেও মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
এরা পুনর্বাসিত হয়ে সমাজের স্বাভাবিক সুস্থ্যধারায় ফিরতে নিজেরাই খুববেশি ইচ্ছুক নয়। কারণ যেভাবে চলছে, এভাবেই তাদের ইনকাম বেশি। তাছাড়া দল বেঁধে দস্যুবেশে রামরাজ্যে যা খুশি তাই করে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এহেন পরিস্থিতিতে হিজড়াদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে সরকার বাহাদুর অপারগ নয়, বরং সদিচ্ছার অভাব। মাত্র একটিবার হার্ড লাইনে গেলেই সমস্যার রাতারাতি সমাধান। ভাল মুখ, ভাল কথা, ভালবাসা ও রাজভোগ যেখানে ব্যর্থ, সেখানে বাঘের চোখ। ‘ভীতিপ্রদর্শন-বিদ্যে বড় বিদ্যে, ভূত পালায় ডরে’।