লালমনিরহাট বালুময় তিস্তা’র চর এখন সবুজে সমাহার
- আপডেট সময় : ০৭:৩১:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৬৮
লালমনিরহাট সংবাদদাতা:
সীমান্ত ঘেঁষে যাওয়া লালমনিরহাট জেলার সর্বনাশী তিস্তা নদীর জেগে ওঠা পুরো চর এখন সবুজে রুপ নিয়েছে। যতদুর চোখ যায় শুধু মনে হয় সবুজে সমাহার। নদী পারের শয়সম্ভল হারানো লোকগুলোর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। সেই জেগে ওঠা চরে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। সে জমিতে বানভাসি সয়সম্বল হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে যাওয়া লোকগুলো ভুট্টা, আলু, গম, সরিষা, তামাকসহ হরেক রকম ফসল বুনছে।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও পানি নেমে গিয়ে পলি জমা পড়ায় ভালো ফলনের আসায় বুক বাধছে তিস্তা- পাড়ের কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত টানা পরিশ্রম করছে বন্যার ক্ষতি কিছুটা পুশিয়ে নেওয়ার জন্য। এসব ফসলের মধ্যে বেশির ভাগই আগুর ভুট্টা চাষাবাদ করছে। ভুট্টা চাষাবাদে খরচ কম ও লভ্যাংশ বেশি থাকায় সেই দিকেই ঝুঁকছে কৃষকগণ। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে কিছুটা ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবে বানভাসি তিস্তা পারের মানুষজন।
আদিতমারী মহিষ খোঁচা চর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে পানি নেমে যাওয়ার পর আমি প্রায় ৩ একর জমিতে আগুর ভুট্টা লাগিয়েছি। চরে পলি জমায় তেমন কোন কীটনাশক ব্যবহার করিনি। শুধু সময় মত পানির সেচ-হালকা ইউরিয়া স্যার আর পরিচর্যা করে চলছি। কিছু দিনের মধ্যে আমার ভুট্টা পাক ধরবে। সব মিলে ২০/২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কোন বিপদ আপদ না ঘটলে মোটামুটি লভ্যাংশ পাবো।
সদরের রাজপুর এলাকার স্কুল মাষ্টার প্রফুল্ল রায় বলেন, গেল বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে, গত মাসে চরের ৯৬ শতক জমিতে তামাক ও ৩৪ শতক জমিতে ভুট্রা চাষাবাদ করেছি। স্যার কীটনাশকের যে দাম তাথে বেশি লভ্যাংশের মুখ দেখা যাবেনা। গেল বন্যায় যে পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তা পুশিয়ে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। কৃষি চাষাবাদে সরকারের কোন সহায়তা আমরা পাচ্ছি না।
কালীগঞ্জের ভোটমারী চর এলাকার কৃষক আয়নাল হোসেন বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ৩৩শতক জমিতে ভুট্টা ১৮শতক জমিতে ভারর্জিন তামাক চাষ করেছি। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে সময় মত ঘরে তুলতে পারলে লাভের মুখ দেখতে পারবো। কৃষি অফিসের সহযোগিতার কথা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সহযোগিতা তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোন লোক আসেনি।
হাতিবান্ধা গড্ডিমারী এলাকার কৃষক লিটন সরকার প্রতিদিনের নিউজ কে বলেন, প্রতি বছর বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, সেই ঘাটতি পূরণ করতে অনেক বেগ পেতে হয়। তাই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুর ভুট্টা চাষাবাদ করি। এবারে ৩ একর জমিতে ভুট্টা ৩৪ শতক জমিতে সরিষা ও ২৩ শতক জমিতে তামাক চাষাবাদ করেছি। কৃষি অফিসের সহায়তা ও পরামর্শে সব কিছু করছি। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ভালো কিছু আসা করছি।
পাটগ্রাম হাজিরহাট এলাকার কৃষক ময়নুল ইসলামের সাথে কথা হয় এবিষয়ে তিনি বলেন, আমায় তিস্তানদী সর্বনাশ করেছে, গেল বন্যায় ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার জন্য ৬৬শতক জমিতে ভুট্টা ও ২২শতকে সরিষা চাষ করেছি। সময়মত ঘরে নিতে পারলে লাভের মুখ দেখতে পারবো। আজ পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে কোন প্রকার সহায়তা আমরা পাইনি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান প্রতিদিনের নিউজ কে বলেন, গেল বছর ভুট্টা চাষাবাদে যে লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো, তার চেয়ে দ্বিগুণ ভুট্টা এবারে চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার ফলনও ভালো হবে। কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত কিছু কৃষক ছাড়া সবাইকে সহায়তা প্রদান করা সম্ভবপর নয়, তারপরও সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে কৃষি অফিসগুলো।