ইমামপুর পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষকের পুনরায় যোগদান নিয়ে বিতর্ক

- আপডেট সময় : ০৮:৩২:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
- / ৯২

মতলব উত্তর প্রতিনিধি:
মতলব উত্তরের ইমামপুর পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষক নওশের আজমের হঠাৎ পুনরায় যোগদান নিয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তিনি পূর্বে কাউকে কিছু না জানিয়ে ২৬ মাস পূর্বে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখে পুনরায় প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেন। তবে তার এই ফিরে আসা ছিল সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই, যা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নওশের স্যারের এই অনুপস্থিতি ও হঠাৎ ফিরে আসা আমাদের জন্য বিস্ময়ের ছিল। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর পুনরায় যোগদানের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি প্রয়োজন। অথচ তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজে থেকেই ক্লাস নেওয়া শুরু করেন।
আরেকজন শিক্ষক বলেন, এ ধরনের আচরণ বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতি অসম্মানজনক। আমরা শিক্ষকদের মধ্যেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত।
শুধু শিক্ষকরা নয়, শিক্ষার্থীরাও তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, “স্যার আমাদের ঠিকমতো ক্লাস নেন না। মোবাইল দেখে দেখে বোর্ডে কিছু লেখেন, আর যখন আমরা গণিতের কোন বিষয় জিজ্ঞেস করি, তখন তিনি তেমন কিছুই ব্যাখ্যা করেন না।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্যার আমাদেরকে সবসময় ভয় দেখান, ক্লাসে কথা বললেই ধমক দেন বা খারাপ ব্যবহার করেন। আমরা মনে করি তিনি ক্লাস নেওয়ার জন্য উপযুক্ত নন।
অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাই। কিন্তু যদি এমন শিক্ষকরা দায়িত্বে থাকেন, তাহলে আমাদের সন্তানরা কি শিক্ষা পাবে? শিক্ষক নওশের আজমের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছি, তবে পূর্বের কিছু বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা সঠিক হবে না। যেহেতু এটি একটি প্রশাসনিক ও অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই আমি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে ইচ্ছুক নই। যদি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করে, তখন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আমার অবস্থান তুলে ধরব। আমি চাই, বিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক থাকুক।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। একজন শিক্ষক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর চাকরিতে ফিরে আসতে পারেন না। এটি পরিষ্কারভাবে বিধি-বহির্ভূত। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিক্ষক নওশের আজমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহমুদা কুলসুম মনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। যদি এমন হয় তাহলে আমরা নওশের আজমের বিষয়ে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু আমরা মেনে নেব না।
সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন শিক্ষককে শুধু শিক্ষাদান নয়, বরং শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং দৃষ্টান্তমূলক আচরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে একটি আদর্শ স্থাপন করতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে নওশের আজমের আচরণ এবং তার পুনরায় যোগদান নিয়ে যেভাবে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা অবিলম্বে তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট মহল।