০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ফুলে ফুলে সয়লাব বন্দরে‘র সাবদি গ্রাম

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০১:১০:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৯

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ :

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদি গ্রাম। পরিচিতি পেয়েছে ফুলের রাজ্য হিসেবে। যতদূর চোখ যায়, রং বেরঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। যেন ফুলের বিছানা। এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থী ও ফুলপ্রেমীরা প্রতিদিনিই সেখানে ভিড় করছেন। ফেব্রুয়ারিজুড়ে উপলক্ষ বেশি। আছে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও একুশে ফেব্রুয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস)।

এসব দিবস ঘিরে প্রতি বছরই এখানকার ফুলের ব্যবসা চাঙ্গা হয়। এ বছর ৮০ হেক্টর জমিতে আড়াইশ থেকে তিনশ চাষি ফুলের চাষাবাদ করেছেন। তবে পানি সংকটে লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা। অন্যদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, বন্দরের উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি গ্রামে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। তবে আশপাশের দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলা গ্রামের ৮০ হেক্টর জমিতে নানা জাতে ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে রজনিগন্ধা, গাঁদা গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর ও রক্তজবা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাবদিসহ আশপাশের গ্রামে ১২ থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ ফুলের বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানকার ফুল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে। তবে জানা যায়, এ বছর পানি সংকটের কারণে সময়মতো ফুল ফোটেনি। এতে লোকসানের শঙ্কা আছে। তার পরও ফেব্রুয়ারির তিন দিবসকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভালো বেচাবিক্রির আশায় বুক বাধছেন।

সাবদি এলাকার মো. সজল বলেন, ভালোবাসা দিবসসহ তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে ১৫ কানি জমিতে ফুল চাষ করেছি। প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে ফুল ফুটে। তবে এবার পানি সংকট থাকায় পরে চাষাবাদ শুরু করেছি। সময়মতো সব ফুল ফোটেনি। রমজান শুরু হলে বেচাকেনা তেমন হবেও না। তিনি আরও জানান, আশপাশের খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। তা ছাড়া শেষ সময়ে সেভাবে বৃষ্টিও হয়নি।

ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন নাহিদা খানম শিমু। তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো ফুলের টানে এবারও ছুটে এসেছি। আমার মতো আরও অনেকে দূর থেকে এসেছেন। ষাটোর্ধ্ব আবিদা রহমান মেয়েকে নিয়ে ফুলের গ্রাম সাবদিতে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে এখানে এসেছি। বেশি ভালো লেগেছে ডালিয়া ফুল। সপরিবারে এসেছেন রুমি বেগম। তিনি ঘুরতে এসে পছন্দমতো ফুল কিনেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। গত বছর প্রায় ৪ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এবার প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, ফুলচাষি শাহ আলমের স্ত্রী মোসা. শেফালি বলেন, পানি সংকটের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে জানাননি। কারণ এটি জানলে আশপাশের লোকজন ঝামেলা করবে। কারণ খাল খনন করলে তাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি কমে যাবে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এ শঙ্কায় কাউকে অভিযোগ করিনি।

পানি সংকট ও সময়মতো ফুল না ফোটার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমি ও আমাদের টিম সাবদি এলাকায় ফুলের বাগান ঘুরে এসেছি। ফলন ভালো হয়েছে। সব ধরনের ফুল ফুটন্ত অবস্থায় দেখেছি। তবে পানি সংকটের বিষয়ে কেউ জানাননি। ফুলচাষিদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তখন তারাও সমস্যার কথা জানাননি। তা ছাড়া খাল ভরাট হয়ে গেলেও মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করে সেচের কাজ করা যেত। তার পরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

ফুলে ফুলে সয়লাব বন্দরে‘র সাবদি গ্রাম

আপডেট সময় : ০১:১০:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ :

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদি গ্রাম। পরিচিতি পেয়েছে ফুলের রাজ্য হিসেবে। যতদূর চোখ যায়, রং বেরঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। যেন ফুলের বিছানা। এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থী ও ফুলপ্রেমীরা প্রতিদিনিই সেখানে ভিড় করছেন। ফেব্রুয়ারিজুড়ে উপলক্ষ বেশি। আছে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও একুশে ফেব্রুয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস)।

এসব দিবস ঘিরে প্রতি বছরই এখানকার ফুলের ব্যবসা চাঙ্গা হয়। এ বছর ৮০ হেক্টর জমিতে আড়াইশ থেকে তিনশ চাষি ফুলের চাষাবাদ করেছেন। তবে পানি সংকটে লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা। অন্যদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, বন্দরের উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি গ্রামে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। তবে আশপাশের দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলা গ্রামের ৮০ হেক্টর জমিতে নানা জাতে ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে রজনিগন্ধা, গাঁদা গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর ও রক্তজবা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাবদিসহ আশপাশের গ্রামে ১২ থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ ফুলের বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানকার ফুল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে। তবে জানা যায়, এ বছর পানি সংকটের কারণে সময়মতো ফুল ফোটেনি। এতে লোকসানের শঙ্কা আছে। তার পরও ফেব্রুয়ারির তিন দিবসকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভালো বেচাবিক্রির আশায় বুক বাধছেন।

সাবদি এলাকার মো. সজল বলেন, ভালোবাসা দিবসসহ তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে ১৫ কানি জমিতে ফুল চাষ করেছি। প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে ফুল ফুটে। তবে এবার পানি সংকট থাকায় পরে চাষাবাদ শুরু করেছি। সময়মতো সব ফুল ফোটেনি। রমজান শুরু হলে বেচাকেনা তেমন হবেও না। তিনি আরও জানান, আশপাশের খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। তা ছাড়া শেষ সময়ে সেভাবে বৃষ্টিও হয়নি।

ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন নাহিদা খানম শিমু। তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো ফুলের টানে এবারও ছুটে এসেছি। আমার মতো আরও অনেকে দূর থেকে এসেছেন। ষাটোর্ধ্ব আবিদা রহমান মেয়েকে নিয়ে ফুলের গ্রাম সাবদিতে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে এখানে এসেছি। বেশি ভালো লেগেছে ডালিয়া ফুল। সপরিবারে এসেছেন রুমি বেগম। তিনি ঘুরতে এসে পছন্দমতো ফুল কিনেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। গত বছর প্রায় ৪ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এবার প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, ফুলচাষি শাহ আলমের স্ত্রী মোসা. শেফালি বলেন, পানি সংকটের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে জানাননি। কারণ এটি জানলে আশপাশের লোকজন ঝামেলা করবে। কারণ খাল খনন করলে তাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি কমে যাবে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। এ শঙ্কায় কাউকে অভিযোগ করিনি।

পানি সংকট ও সময়মতো ফুল না ফোটার বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমি ও আমাদের টিম সাবদি এলাকায় ফুলের বাগান ঘুরে এসেছি। ফলন ভালো হয়েছে। সব ধরনের ফুল ফুটন্ত অবস্থায় দেখেছি। তবে পানি সংকটের বিষয়ে কেউ জানাননি। ফুলচাষিদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তখন তারাও সমস্যার কথা জানাননি। তা ছাড়া খাল ভরাট হয়ে গেলেও মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করে সেচের কাজ করা যেত। তার পরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন