৩ দিন পার হলেও মেলেনি সুন্দরবনে অপহৃত ১৫ জেলের সন্ধান
- আপডেট সময় : ০৭:২৯:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৬৪
এনায়েত করিম রাজিব, বাগেরহাট:
সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে মুক্তিপণের দাবিতে জলদস্যুদের হাতে অপহৃত ১৫ জেলে গত ৪ দিনেও উদ্ধার হয়নি। এতে করে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে অপহৃত জেলেদের পরিবারের। যদিও অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড ও বনবিভাগ অভিযান চালাচ্ছে। তবে কোন বাহিনী জেলেদের নিয়ে গেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।
এর আগে, গত রবিবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনে মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের সময় জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহৃত জেলেরা দুবলার আলোরকোল চরে অবস্থান নিয়ে সাগরে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়া কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
এ ঘটনার ৩দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত জেলেরা উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জেলেপল্লীর বাসিন্দারা। ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ সবার পক্ষ থেকে এই দাবি জানান।
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, রোববার দুবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে ১৫ জেলেকে অপহরণ করে জলদস্যুরা। অপহৃত জেলেরা দুবলার আলোরকোল চরে অবস্থান নিয়ে সাগরে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়া কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এসময় আরও জেলেদের অপহরণের চেষ্টাকালে তিন দস্যুকে মারধর করে আটক করে জেলেরা। পরবর্তীতে আটকদের কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কামাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অপহৃত জেলেদের উদ্ধারের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছে দুবলার চরের ১১ হাজার জেলে। জলদস্যুদের কারণে কোনো জেলেই নিরাপদ নয়। দস্যুদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সুন্দরবন ও দুবলার চরে কিছু দিন পরে জেলেদের যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
জেলেদের উদ্ধার ও দস্যুদমনে দ্রুত অভিযান পরিচালনা জন্য গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছে দুবলার চরের ১১ হাজার জেলে। ই-মেইল যোগে এই আবেদন পাঠানো হয়। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ৩ ডাকাত সদস্যকে আটক করে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে জেলেরা। এসময় ডাকাতদের কাছ থেকে একটি একনলা বন্দুক ও ৩৬টি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
আটকরা ডাকাত সদস্যরা হলো—বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার জাহাঙ্গীর শেখ (৫১), খুলনার পাইকগাছা উপজেলার জাহাঙ্গীর মোড়ল ওরফে রহমত (৩৩) এবং সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রবিউল মোল্লা (২৬)। এরা সবাই দয়াল বাহিনীর সদস্য বলে জানা প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এঘটনায় কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের আলোরকোল কন্টিনজেন্ট কমান্ডার (সিসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। থানার ওসি মো. শহীদুল্লাহ এতথ্য জানিয়েছেন।
গত চার দিনেও অপহৃত ১৫ জেলেদের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় সুন্দরবনের দুবলা শুঁটকি পল্লীতে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। দস্যুদের পক্ষ থেকেও মুক্তিপণের জন্য জেলেদের পরিবার বা মহাজনদের সাথে এখন পর্যন্ত কোন যোগাযোগ করেনি।
অপহৃত জেলেরা হলেন শাহআলম, আজাহারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আরাফাত হোসেন, আলমগীর হোসেন, শাহাজান গাজী, রাসেল, শাহজাহান ঢালী, হাফিজুর রহমান, শাহীনুর আলম, ,মতিয়ার সরদার, খান রফিক, রিপন মোড়ল, নুরে আলম, ও নাথন বিশ্বাস। তাদের বাড়ি খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায়। অপহৃত জেলেরা দুবলার আলোরকোল চরে অবস্থান নিয়ে সাগরে মাছ শিকার ও শুঁটকি প্রক্রিয়া কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
জেলে অপহরণের ঘটনায় দীর্ঘ ছয় বছর পর নতুন করে আবার বনদস্যু আতঙ্কে ভুগছেন দুবলার বিশেষ টহল ফাঁড়ির অধীনে শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরের প্রায় ১২ হাজার জেলে ও তাদের মহাজনরা।
এব্যাপারে বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, সুন্দবনের দুবলার চরের অপহৃত ১৫ জেলেদের উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বনরক্ষীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বিত অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হবে।