মতলপয বোরো মৌসুমে সেচ প্রকল্পের ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পানি পাচ্ছে না কৃষক
- আপডেট সময় : ০৯:৪২:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২৪
মমিনুল ইসলাম:
জানুয়ারির ১তারিখে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি সেচের উদ্বোধন করার কথা হলেও বোরো আবাদের সেচ সুবিধা পায়নি কৃষাকরা। এদিকে সঠিক সময়ে পানি না দেয়ায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যের আশঙ্কা রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা।
জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প মেঘনা-ধনাগোদা। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর জমি নিয়ে অধিক কৃষি পণ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ১৯৭৯-৮০ অর্থ বছরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে এর কাজ শেষ হয়। সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধার মাধ্যমে ধান উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি নিমার্ণ করা হয়েছে। সেচ সুবিধার মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদনই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু বোরো মৌসুমের শুরুতে কখনোই সেচ সুবিধা পায়নি কৃষক। এ কারণে সেচ প্রকল্প নির্মাণের পর অধিকাংশ মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বীজতলা করার উপযুক্ত সময়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করতে হয়। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপন করতে হবে। ৪০ দিনের চেয়ে চারার বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমেই উৎপাদন কমতে থাকবে।
তারা আরো জানান, মতলব উত্তর উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৯শ ৮৪হেক্টর জমিতে। কৃষকরা এ লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে বীজতলা তৈরি করে বসে আছে। অথচ এ পর্যন্ত কৃষকরা পানি সেচ পায়নি। এদিকে চারার বয়স দিন দিন বেড়েই চলছে। অনেকের চারার বয়স ৬০ দিন পার হয়ে গেছে। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপন করতে হয়। তা না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমতে থাকে। সঠিক সময়ে পানি না দেয়ায় বোরো উৎপাদনে বিপর্যের আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের বিভিন্ন যায়গায় এখনো ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন যায়গায় কাজ চলছে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। সেচ প্রকল্প এলাকার আমিয়াপুর, দেওয়ানজীকান্দি সহ কয়েকটি জায়গায় সেচ ক্যানেলে বাঁধ দিয়ে চলছে কালভার্ট নির্মাণের কাজ।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের একাদিক কৃষকরা জানান, পানি কবে দিবে তা আমরা জানিনা। আমাদের বীজতলার ধানের চারা গুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে ধান রোপণ করতে না পারলে ভালো ফসল উৎপাদন হবে না। আমরা লোকসানে পরে যাব। পানির জন্য আমরা জমিতে ধান লাগাতে পারছি না।
তারা আরো জানান, আমরা বিকল্প পদ্ধতি স্যালো ইঞ্জিন চালিত পাম্পের মাধ্যমে জমিতে পানি পানি দিয়ে ধানের চারা রোপন করতে অনেক খরচ হয়ে যাবে। তাছারা খাল ও বিলের পানি শুকিয়ে গেছে।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি ফয়েজ আহম্মেদ চৌধুরী (শাহীন) জানান, সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে, আর আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি হয়েছে এবং এই প্রকল্পের আওতায় অনেক জায়গায় সরিষার আবাদ হয়েছে এ কারনে পানি দিতে একটু দেরি হচ্ছে। কিছুদিন নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদান করেছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে খুব দ্রুত ক্যানেলে পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, সঠিক সময়ে সেচ ক্যানালে পানি দিতে না পারলে বোরো মৌসুমের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে। আমার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই তারা সেচ প্রকল্পের পানি সেচের উদ্বোধন করা হবে। এবিষয়ে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।