‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ প্রদান ও ‘সম্পর্কের অবনতি হবে না’ প্রসঙ্গ : জুবাইর হোসেন
- আপডেট সময় : ১২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
- / ১১২
প্রতিদিনের নিউজ :
শেখ হাসিনা পৃথিবী বিভিন্ন দেশে এখন থেকে যেতে পারবেন ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতদিন তার কোন পাসর্পোট ছিল না কারণ তার কূটনৈতিক পাসর্পোটের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তিনি যেহেতু সাধারণ পাসর্পোট নেননি কাজেই তার পক্ষে কোন দেশের ভিসা চাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে সম্প্রতি ভারত সরকার তাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট বা আইসি (Identity Certificate) দিয়েছে।
ভারতের এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যুর ফলে একাধিক সুবিধা পাবেন শেখ হাসিনা। এটি তার আর্ন্তজাতিক ভ্রমন ও কূটনৈতিক কার্যক্রমকে সহজতর করবে। এর ফলে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করতে পারবেন। ট্রাভেল ডকুমেন্ট তার পাসর্পোটের প্রয়োজনীয়তা পূরন করবে। এটি তাকে ঐসব দেশে ভ্রমনের সুযোগ দিবে যেখানে ভিসা নীতি মালা বেশ কঠিন কিংবা যেখানে যেতে বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন হয়। এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়া মানে তিনি ভিসা পেতে বিশেষ সুবিধা পাবেন। এটি প্রদান করে ভারত সরকার তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদানের ইঙ্গিত দিতে পারে। এতে করে তিনি ভারতের সহযোগিতায় তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে সক্ষম হবেন। এক কথায় এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রাপ্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ভ্রমন, কূটনৈতিক সুরক্ষা এবং ভিসা সহায়তার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা পাবেন।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দেওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের কিছু বিষয়ে অস্বস্তি ছিল, সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করব। আমাদের মধ্যে বিদ্যমান যে সম্পর্ক আছে, সেটা বজায় থাকবে। সম্পর্ক উন্নয়ন উভয়েরই দরকার। ভারতের যেমন আমাদের দরকার, তেমনি আমাদেরও তাদের দরকার।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট যেকোনো দেশ যেকোনো ব্যক্তিকেই ইস্যু করতে পারে। আমাদের তা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। তবে কোনো মামলায় যদি তাঁকে (শেখ হাসিনা) আদালত হাজির করতে নির্দেশ দেন, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এখানে উল্লেখ্য, দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক কিন্তু দুটি সরকার বা দুটি ব্যক্তির সম্পর্কের মাঝে সীমা বদ্ধ নয়। এখানে জনগন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। কূটনৈতিক জায়গা থেকে কখনো কখনো শক্ত শব্দ প্রয়োগ করে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করতে হয়, কখনো বা হালকা ধরনের শব্দ চয়নের মাধ্যমে একটি সহাবস্থানের জায়গায় আসতে হয়। সরকারি দায়িত্বে থেকে অনেক সময় সাধারণ জনগনের মতো করেই অন্য দেশের সম্পর্কে মন্তব্য করা যায় না ঠিক। তাই বলে এই বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে কি কৈফিত চাওয়া যেত না?।
প্রথমত একজন অত্যন্ত নির্মম গণ-হত্যায় দোষী, স্বৈরাচারী ,পতিত সরকার প্রধানকে বাংলদেশে ফিরিয়ে না দিয়ে তাকে আশ্রয় দেয়া তার উপর তাকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেয়া বাংলাদেশে রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সুসম্পর্কের বদলে ব্যক্তি বিশেষের সাথে ‘নিবিড়’ সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। কাজেই ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ প্রদান করলেও ‘সম্পর্কের অবনতি হবে না’এতটা হালকা ভাবে বিষয়াট কে বিবেচন করা উচিত হয়েছে কি ? উল্লেখ্য বর্তমান চতুর্দশ দালাই লামা তেনজিং গিয়াৎসো চীন কর্তৃক তিব্বত অধিগৃহীত হওয়ার পর ১৯৫৮ সালে তার কিছু অনুগামীসহ গোপনে দেশত্যাগ করে ভারতে আগমন করেন এবং ভারত সরকার তাঁকেও ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছিল। তবে এই দুজনের ব্যপারে পরি¯ি’তি ও প্রেক্ষাপট পুরোপুরি আলাদা।
বাংলাদেশ সরকার আজ অথবা কাল অবশ্যই এই ফ্যাসিস সাবেক প্রধান মন্ত্রীকে ফেরত চাইবে অন্তত এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যে সেটিই বোঝা যায়। তখন ভারত সরকার ‘তিন অন্যত্র চলে গেছেন’ এমন একটি দায় সাড়া উত্তর দিয়ার সুযোগ পাবে।
ভারত কে চাপের রাখার সুযোগ আমরা কেন ছেড়ে দিব? তাকে আইসি দিয়ে বিশ্ব ভ্রমনের সুযোগ দেয়ার পরও কেন ভারতের কাছে আমারা এই বিষয়টির জন্য জবাব চাইব না? কেন আমরা অন্তত সুকৌশলে হলেও বলবনা যে এটি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে চাপ তৈরি করবে? এক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগনের প্রত্যাশার একেবারে বিপরীতে নেয়া হয়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে কেমন সম্পর্ক চায় তা তাকেই (ভারত) ঠিক করতে হবে। ভারতের মিডিয়া প্রায়শই অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে আসছে।
গত শনিবার (১২ অক্টোবর) ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়-‘বাংলাদেশকে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু এবং তাদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে ভারত। ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকায় পূজামন্ডপে ‘বোমা নিক্ষেপ’ এবং সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দির থেকে দেবী কালীর মুকুট চুরির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে দিল্লি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ঢাকার তাঁতীবাজারে একটি পূজা মন্ডপে হামলা এবং সাতক্ষীরার শ্রদ্ধেয় যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে চুরির ঘটনাকে গুরুতর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি’। ‘এগুলো দুঃখজনক ঘটনা। তারা মন্দির এবং দেবতাদের অবমাননা ও ক্ষয়ক্ষতি করার নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে। যা আমরা এখন বেশ কয়েকদিন ধরে প্রত্যক্ষ করেছি’। হিন্দুস্তান টাইমে (বাংলা) শিরোনাম হয় এভবে- ‘চাপে পড়ে কি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলেন বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস।’ এধরনের সংবাদ বাংলাদেশের জনগনের মনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। কাজেই আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে ভারতের ব্যপারে প্রয়োজনাতিরিক্ত ‘সফট’ ভাব দেখানো পক্ষান্তরে ভারতের কছে কূটনৈতিক পরাজয় হিসাবে বিবেচিত হবে। এই ঘটনা সহ বিগত
সরকার আমলে তাদের দ্বারা সংঘটিত যেকোন অন্যায়ের সাথে ভারতের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহায়তার প্রমাণ পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ভারতের সাথে পারষ্পরিক বিভিন্ন চুক্তি কিংবা সমঝোতা করার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক নিয়ম অনুযায়ি এইসকল বিষয় সামনে এনে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে পারাই হবে ভারতের সাথে কূটনৈকিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে সফলতা।