১০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

নেত্রকোনায় জঙ্গি আস্তানায় ২৯ ঘন্টার অভিযানের সমাপ্তি

রিপন কান্তি গুণ :
  • আপডেট সময় : ১২:০৭:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
  • / ৮৮

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি দ্বিতল ভবনে ২৯ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর সমাপ্তি ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন (৯ জুন) রবিবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা দিয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, রবিবার সকাল থেকে সেখানে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াট ইউনিট ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট তল্লাশি চালায়। দিনভর অভিযানে সেখান থেকে ছয়টি বোমাসহ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বিকালে বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরও জানান, বাড়িটিতে ভাড়া থাকা ফাহিম ওরফে আরিফ নামের এক যুবক গত ৫ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে প্রথম নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ ভাসাপাড়া গ্রামের দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১৭টি গুলি, ২টি ওয়াকিটকি, ১টি হাতকড়া ও ১ বস্তা জিহাদি বই উদ্ধার করে। এরপর অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াট টিম এসে রবিবার দ্বিতীয় দফা অভিযান চালায়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুল্লাহ চৌধুরী, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন এবং নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ।

অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তারা বলেন, বড়িটি থেকে যে সকল অত্যাধুনিক আলামত উদ্ধার করা হয়েছে তাতে মনে হয়- বাড়িটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

অভিযান শেষে রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে উদ্ধার করা আলামত উপস্থাপন করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে- জঙ্গি প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, গুলি, খেলনা বন্ধুক, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, রামদা, প্লাস্টিকের খেলনা রাইফেল, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, দূরবীন, জিহাদি বইসহ প্রায় ৮০ প্রকার সরঞ্জাম।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে নির্জন স্থানে বাড়িটি নির্মাণ করেন আটপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার ড. আবদুল মান্নান। তিনি ডুয়েটের শিক্ষক ছিলেন।

তারা আরও জানান, বর্তমানে বাড়ির ভেতরে থাকা দুটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এছাড়া প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। বাড়িটি ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানা প্রাচীর আগের চেয়ে আরও দেড় ফুট উঁচু করেন। এর ফলে বাইরে থেকে ওই বাড়ির ভেতরের কিছুই দেখা যায় না। বাড়িটির নারকেল গাছ, আমগাছসহ সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। স্থানীয় কাউকে বাড়িটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমদ বলেন, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা রাতেই নেত্রকোনায় পৌঁছে সকাল থেকে বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন। এখানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়– এমন তথ্য ছিল। সে অনুযায়ী বাড়িটির ওপর নজর রাখা হয়। বোমা বিশেষজ্ঞ টিম বিকেলে বাড়ির ভেতরে পাঁচটি ও বাড়ির বাইরে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

নেত্রকোনায় জঙ্গি আস্তানায় ২৯ ঘন্টার অভিযানের সমাপ্তি

আপডেট সময় : ১২:০৭:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি দ্বিতল ভবনে ২৯ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর সমাপ্তি ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন (৯ জুন) রবিবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা দিয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, রবিবার সকাল থেকে সেখানে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াট ইউনিট ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট তল্লাশি চালায়। দিনভর অভিযানে সেখান থেকে ছয়টি বোমাসহ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বিকালে বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরও জানান, বাড়িটিতে ভাড়া থাকা ফাহিম ওরফে আরিফ নামের এক যুবক গত ৫ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে প্রথম নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ ভাসাপাড়া গ্রামের দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১৭টি গুলি, ২টি ওয়াকিটকি, ১টি হাতকড়া ও ১ বস্তা জিহাদি বই উদ্ধার করে। এরপর অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াট টিম এসে রবিবার দ্বিতীয় দফা অভিযান চালায়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুল্লাহ চৌধুরী, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন এবং নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ।

অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তারা বলেন, বড়িটি থেকে যে সকল অত্যাধুনিক আলামত উদ্ধার করা হয়েছে তাতে মনে হয়- বাড়িটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

অভিযান শেষে রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে উদ্ধার করা আলামত উপস্থাপন করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে- জঙ্গি প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, গুলি, খেলনা বন্ধুক, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি, রামদা, প্লাস্টিকের খেলনা রাইফেল, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, দূরবীন, জিহাদি বইসহ প্রায় ৮০ প্রকার সরঞ্জাম।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে নির্জন স্থানে বাড়িটি নির্মাণ করেন আটপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার ড. আবদুল মান্নান। তিনি ডুয়েটের শিক্ষক ছিলেন।

তারা আরও জানান, বর্তমানে বাড়ির ভেতরে থাকা দুটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এছাড়া প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। বাড়িটি ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানা প্রাচীর আগের চেয়ে আরও দেড় ফুট উঁচু করেন। এর ফলে বাইরে থেকে ওই বাড়ির ভেতরের কিছুই দেখা যায় না। বাড়িটির নারকেল গাছ, আমগাছসহ সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। স্থানীয় কাউকে বাড়িটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমদ বলেন, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা রাতেই নেত্রকোনায় পৌঁছে সকাল থেকে বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন। এখানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়– এমন তথ্য ছিল। সে অনুযায়ী বাড়িটির ওপর নজর রাখা হয়। বোমা বিশেষজ্ঞ টিম বিকেলে বাড়ির ভেতরে পাঁচটি ও বাড়ির বাইরে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন