জেলেদের আয়ের সবটাই যাচ্ছে মতলব উত্তরের দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে
- আপডেট সময় : ১২:১০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪
- / ১০২
মতলব উত্তর উপজেলার প্রধান ২টি নদী পদ্মা ও মেঘনার তীরবর্তী গ্রামগুলোর জেলেরা হতদরিদ্র। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের লাল খাতায় লিখিয়ে তাদের চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। জেলেদের কষ্টের আয়ের টাকার সবটাই দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যায়।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলায় নিবন্ধিত (কার্ডধারী) জেলে ৮ হাজার ২২ জন। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় নিবন্ধিত মোট জেলে ৫ হাজার ৩১৮ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবুর বাজার, কলাকান্দা ইউনিয়নের দশানী বাজার, ফরাজীকান্দী ইউনিয়নের আমিরাবাদ বাজার, এখলাসপুর লঞ্চঘাট, মোহনপুর বেড়ীবাঁধ, জহিরাবাদ মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত।
ষাটনলের বাবুর বাজার, আমিরাবাদ বাজার, কালির বাজার, কালিপুর বাজার, নন্দলাল পুর বাজার, ফরাজীকান্দীর মুক্তিরপল্লী ও দশানী বাজারে রয়েছে শতাধিক মাছের গদি। গদি মালিকরা সাধারণ জেলেদেরকে দাদন দিয়ে থাকে। মানতা জেলে আনার, কামাল, হজলা, স্থানীয় জেলে খোকন, ও তাজু জানায়, জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সেই টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর গদিতে (আড়তে) এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। আর নিলামে ওঠার আগেই জেলেদের মজুত মাছের এক- দশমাংশ গদিদার সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে ফেলা মাছ পরে আবার নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়। আর সবটাই লিখে রাখা হয় লাল খাতায়। একবার এক গদি থেকে দাদন নিয়ে কোনো জেলে পরিশোধ করতে পারে না নিজ আয়ে। এক গদির দেনা মিটাতে হাত পাততে হয় আরেক গদিতে।
ষাটনল বাবু বাজারের জেলে পাড়ার টিটু বর্মন, সরকারই পারে সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে। নতুবা আমাদের অভাব কোনো দিন শেষ হবে না।
বোরচর গ্রামের আবুল মাঝি বলেন, গদিতে প্রথমে মাছ, এরপর নগদ টাকা কেটে নেন। এভাবে মাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা তাদের পকেটে চলে যায়। এই কারণে দিনরাত পরিশ্রম করেও আমাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
বাবুর বাজারের গদি মালিক ফুলচাঁন জানায়, গদি থেকে দাদন নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন। জেলেদের মাছ ধরা জালের পুনঃবুনন করতে অনেক টাকার দরকার হয়। জেলেরা এত টাকা জোগার করে জালের পুনঃবুনন করতে পারে না বলে দাদন নিতে বাধ্য হয়।
আমিরাবাদ বাজারের গদি মালিক রকমান জানায়, জেলেরা আমাদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ ধরেন। আমরা কাউকে জোর করে দাদনের টাকা দিই না। জেলেরা গরিব। নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের কাছে এসে তারা টাকা নেন। সারাদেশের মতো একই নিয়মে আমরা জেলেদের কাছ থেকে মাছ ও টাকা আদায় করি।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, একাধিকবার চেষ্টা করেও জেলেদের দাদন ব্যবসা থেকে দূরে রাখতে পারছি না। সরকারিভাবে জেলেদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা হলে হয়তো দাদন ব্যবসা বন্ধ হবে।