১০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

গরমে নেত্রকোনায় কদর বেড়েছে তাল শাঁসের

রিপন কান্তি গুণ :
  • আপডেট সময় : ০৬:২৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪
  • / ১১০

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বাংলায় জ্যৈষ্ঠ মাস মধু মাস নামে পরিচিত। এই মধু মাসে নেত্রকোনাসহ দশ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে মৌসুমি ফল- আম, জাম, লিচু ও কাঁঠালের মতো এখন বেশ সহজলভ্য তালের শাঁস। আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ তাল শাঁস খাওয়ার জন্য ভীড় জমাচ্ছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। ফলে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন তাল শাঁস বিক্রেতারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের রাজু’র বাজার বড়বাজার মোড়, রেলগেট মোড়, চাঁনখা’র মোড়, সাতপাই মোড়সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও কচি তালের শাঁসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ফল বিক্রেতারা।

তালের শাঁস কিনতে এসব দোকানে ছোট-বড় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করছেন। বিশেষ করে স্থানীয় বাজারগুলোতে তালের শাঁস খুঁজতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।

পৌর শহরের বড়বাজার মোড়ের তালের শাঁস বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে তার।

তিনি আরও জানান, গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে গিয়ে তালগাছের মালিকদের কাছ থেকে চুক্তিতে এসব কচি তাল কিনে তালের শাঁস খুচরা বিক্রি করছি। গরম বেশি পড়ায় খোলাবাজারে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে।

বারহাট্টা উপজেলা সদরের তাল ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাজার খানেক তালগাছ আছে। এসব স্থান থেকে প্রতিটি তাল গাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনে আনি। তাল গাছে ছোট বড় মিলে ৩০০ থেকে ৪০০টি তাল থাকে। প্রতিদিন খুব ভালো বিক্রি হয় তাল শাঁস। প্রতি পিস তাল শাঁস ৫-৭ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে করে ১টি তাল ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। দিনে গড়ে ২৫০টি থেকে ৩০০টি বিক্রি করি। এতে প্রতি তালে লাভ হয় ৪ থেকে ৫ টাকা। এটি মৌসুমী ব্যবসা। এখন থেকে শুরু করে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে এ ব্যবসা।

তালের শাঁস ক্রেতা ইমরান জানান, বাজারের সব কিছুতেই প্রায় কম-বেশি বিষের ব্যবহার হয়। একমাত্র তাল শাঁসই বিষমুক্ত ফল। কচি তালের নরম রসালো শাঁস খেতে খুব সুস্বাদু। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ির সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে যান।

বারহাট্টা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গ্রীষ্মকালের অন্যতম একটি রসালো সুস্বাদু ফল হচ্ছে তালের শাঁস। এটি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। ছোটকালে ১ টাকায় এক হালি তাল শাঁস খেতাম। এখন অনেক দাম তবুও ছেলে-মেয়ের জন্য নিয়মিত কিনে নিয়ে যায়। তালের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতই। নরম ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সকলেই তাল শাঁস খেতে খুবই ভালোবাসে। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় তালের কোন নির্দিষ্ট বাগান নেই। রাস্তার পাশে, ফসলি জমির আইলে অনেক তাল গাছ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে এগুলোর মধ্যে সব গাছে ফল হয় না। তবে ৭-৮ হাজারের মত গাছে তাল হয়।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালরর জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ নাজিস আরেফিন সাকী জানান, তালের শাঁস অতি পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ। মৌসুমী ফলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ ও ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। ফলে ফলগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু তাল শাঁসে কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করা হয় না। তাই তাল শাঁস যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

গরমে নেত্রকোনায় কদর বেড়েছে তাল শাঁসের

আপডেট সময় : ০৬:২৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বাংলায় জ্যৈষ্ঠ মাস মধু মাস নামে পরিচিত। এই মধু মাসে নেত্রকোনাসহ দশ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে মৌসুমি ফল- আম, জাম, লিচু ও কাঁঠালের মতো এখন বেশ সহজলভ্য তালের শাঁস। আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ তাল শাঁস খাওয়ার জন্য ভীড় জমাচ্ছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। ফলে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন তাল শাঁস বিক্রেতারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের রাজু’র বাজার বড়বাজার মোড়, রেলগেট মোড়, চাঁনখা’র মোড়, সাতপাই মোড়সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও কচি তালের শাঁসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ফল বিক্রেতারা।

তালের শাঁস কিনতে এসব দোকানে ছোট-বড় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করছেন। বিশেষ করে স্থানীয় বাজারগুলোতে তালের শাঁস খুঁজতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।

পৌর শহরের বড়বাজার মোড়ের তালের শাঁস বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে তার।

তিনি আরও জানান, গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে গিয়ে তালগাছের মালিকদের কাছ থেকে চুক্তিতে এসব কচি তাল কিনে তালের শাঁস খুচরা বিক্রি করছি। গরম বেশি পড়ায় খোলাবাজারে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে।

বারহাট্টা উপজেলা সদরের তাল ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাজার খানেক তালগাছ আছে। এসব স্থান থেকে প্রতিটি তাল গাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনে আনি। তাল গাছে ছোট বড় মিলে ৩০০ থেকে ৪০০টি তাল থাকে। প্রতিদিন খুব ভালো বিক্রি হয় তাল শাঁস। প্রতি পিস তাল শাঁস ৫-৭ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে করে ১টি তাল ১৫ থেকে ২০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। দিনে গড়ে ২৫০টি থেকে ৩০০টি বিক্রি করি। এতে প্রতি তালে লাভ হয় ৪ থেকে ৫ টাকা। এটি মৌসুমী ব্যবসা। এখন থেকে শুরু করে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে এ ব্যবসা।

তালের শাঁস ক্রেতা ইমরান জানান, বাজারের সব কিছুতেই প্রায় কম-বেশি বিষের ব্যবহার হয়। একমাত্র তাল শাঁসই বিষমুক্ত ফল। কচি তালের নরম রসালো শাঁস খেতে খুব সুস্বাদু। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ির সদস্যদের জন্য কিনে নিয়ে যান।

বারহাট্টা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গ্রীষ্মকালের অন্যতম একটি রসালো সুস্বাদু ফল হচ্ছে তালের শাঁস। এটি খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। ছোটকালে ১ টাকায় এক হালি তাল শাঁস খেতাম। এখন অনেক দাম তবুও ছেলে-মেয়ের জন্য নিয়মিত কিনে নিয়ে যায়। তালের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতই। নরম ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সকলেই তাল শাঁস খেতে খুবই ভালোবাসে। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় তালের কোন নির্দিষ্ট বাগান নেই। রাস্তার পাশে, ফসলি জমির আইলে অনেক তাল গাছ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে এগুলোর মধ্যে সব গাছে ফল হয় না। তবে ৭-৮ হাজারের মত গাছে তাল হয়।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালরর জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ নাজিস আরেফিন সাকী জানান, তালের শাঁস অতি পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ। মৌসুমী ফলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ ও ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। ফলে ফলগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু তাল শাঁসে কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করা হয় না। তাই তাল শাঁস যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন