০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

দিনে হিটস্ট্রোকের ভয়, চাঁদের আলোয় ধান কাটছে মতলব উত্তরের চাষিরা

মমিনুল ইসলাম :
  • আপডেট সময় : ০৮:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
  • / ১৩৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। আর এই দাবদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন চাঁদপুর মতলব উত্তরের ধানচাষিরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে পারছেন না পাকা ধান কাটতে। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলাকে বেছে নিয়েছেন অনেক চাষি। চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলায় এবার আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর।

চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ২শ’ ৮৩ মেট্রিক টন। তবে একটানা চলা প্রচন্ড দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।

সরেজমিন বেশ কয়েকটি ধানের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে দুলছে সোনালী ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেকে গিয়েছে। দিনের বেলা প্রখর রোদের তাপ থাকায় রাতের বেলা চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা। পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের চাষি ৃবোরহান মিয়াজী। এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে করেছেন বোরো ধানের চাষ। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা খুশি এ চাষি। তবে বিপাকে পড়েছেন ধান পাকার পর। প্রচন্ড দাবদাহে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না অনেক শ্রমিক। পরে সিদ্ধান্ত নেন রাতেই কাটা হবে জমির ধান। যেই ভাবা সেই কাজ, ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোয় ধান কাটা শুরু করেন। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।

কৃষক বোরহান মিয়াজী বলেন, আমরা সব সময় দিনের বেলাতেই ধান কাটি। এ বছর প্রচন্ড তাপের কারণে দিনের বেলা কৃষাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে আমি বেশ বিপাকে পড়ে যাই। পরে আমাদের এলাকার সাবেক কাউন্সিলর অলি উল্লাহ দর্জি ভাই রাতের বেলা ধান কাটার উপদেশ দিল। কৃষাণদের বলতেই তারা রাজি হয়ে গেল। যখন দিনের গরম কমে যায় তখন আমরা ধান কাটার কাজ শুরু করি।

চাঁনখার বিলের ধানচাষি রহমত উল্লাহ বলেন, আমি রাতের বেলা কৃষাণ নিয়ে ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.সাফায়াত আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, প্রচন্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।

রাতের বেলা ধান কাটার বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাতে ধান কাটা হচ্ছে। এতে হিটস্ট্রোক এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। তবে এসকল চাষিরা যদি আমাদের হারভেস্টার মেশিনগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আরও দ্রুত ধান সংগ্রহ করতে পারবেন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

দিনে হিটস্ট্রোকের ভয়, চাঁদের আলোয় ধান কাটছে মতলব উত্তরের চাষিরা

আপডেট সময় : ০৮:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। আর এই দাবদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন চাঁদপুর মতলব উত্তরের ধানচাষিরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে পারছেন না পাকা ধান কাটতে। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলাকে বেছে নিয়েছেন অনেক চাষি। চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলায় এবার আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর।

চলতি মৌসুমে মতলব উত্তর উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ২শ’ ৮৩ মেট্রিক টন। তবে একটানা চলা প্রচন্ড দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।

সরেজমিন বেশ কয়েকটি ধানের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে দুলছে সোনালী ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেকে গিয়েছে। দিনের বেলা প্রখর রোদের তাপ থাকায় রাতের বেলা চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা। পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের চাষি ৃবোরহান মিয়াজী। এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে করেছেন বোরো ধানের চাষ। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা খুশি এ চাষি। তবে বিপাকে পড়েছেন ধান পাকার পর। প্রচন্ড দাবদাহে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না অনেক শ্রমিক। পরে সিদ্ধান্ত নেন রাতেই কাটা হবে জমির ধান। যেই ভাবা সেই কাজ, ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোয় ধান কাটা শুরু করেন। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।

কৃষক বোরহান মিয়াজী বলেন, আমরা সব সময় দিনের বেলাতেই ধান কাটি। এ বছর প্রচন্ড তাপের কারণে দিনের বেলা কৃষাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে আমি বেশ বিপাকে পড়ে যাই। পরে আমাদের এলাকার সাবেক কাউন্সিলর অলি উল্লাহ দর্জি ভাই রাতের বেলা ধান কাটার উপদেশ দিল। কৃষাণদের বলতেই তারা রাজি হয়ে গেল। যখন দিনের গরম কমে যায় তখন আমরা ধান কাটার কাজ শুরু করি।

চাঁনখার বিলের ধানচাষি রহমত উল্লাহ বলেন, আমি রাতের বেলা কৃষাণ নিয়ে ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.সাফায়াত আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, প্রচন্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।

রাতের বেলা ধান কাটার বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাতে ধান কাটা হচ্ছে। এতে হিটস্ট্রোক এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। তবে এসকল চাষিরা যদি আমাদের হারভেস্টার মেশিনগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আরও দ্রুত ধান সংগ্রহ করতে পারবেন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন