রামগঞ্জ শিশুপার্কটি ধুধু মরুভূমি, উপরে ফিটফাট-ভিতরে ফাঁকা মাঠ
- আপডেট সময় : ১১:৪৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
- / ১১৭
মোহাম্মদ আলী, রামগঞ্জ :
জেলার রামগঞ্জ পৌর এলাকার বাইপাস সড়কের ডাকবাংলা সংলগ্ন এলাকায় শিশু-কিশোর ও স্থানীয় মানুষদের চিত্তবিনোদনের জন্য নির্মিত একমাত্র শিশুপার্কটি এখন ময়লা আবর্জনার বাগাড়ে পরিনত হয়েছে।
নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও কোন ধরনের খেলনা ও রাইডবিহীন এ শিশু পার্কটি এখন মানুষের হাস্যরসের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায় ২০০৫ সালে সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জিয়াউল হক জিয়া রামগঞ্জ শিশুপার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ উক্ত শিশু পার্ক নির্মাণে অর্থায়ন করে।
উপজেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র রামগঞ্জ শিশুপার্কটি হয়ে উঠে উপজেলাবাসীর প্রানকেন্দ্র। দুর-দুরান্ত থেকে সব বয়সী মানুষদের পদচারনায় মুখরিত ছিলো এলাকাটি। স্থানীয় কিছু লোক শিশুপার্কটি ঘীরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। বাসাবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে রাতারাতি।
সরকারিভাবে শিশুপার্ক ও প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করার জন্য সরকার যেখানে আন্তরিকভাবে অর্থায়ন করছেন ঠিক তখনি রামগঞ্জ উপজেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শিশু পার্কটি দীর্ঘদিন পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়।
বিভিন্ন সময় দলীয় সভা-সমাবেশ ও মেলার আয়োজন করার কারনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগঞ্জ শিশুপার্কটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদকসেবীরা পার্কটির সকল প্রকার রাইড, খেলনা ও বিভিন্ন মূল্যবান আসবাবপত্র খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারী নেই। নেই রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কোন ব্যবস্থা। পার্কের ভিতরের চারপাশে ঝোপজঙ্গল আর ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে।
দিনের বেলায় গরু-ছাগলের চারণ ভূমি, যুবকদের খেলার মাঠ, গাড়ির গ্যারেজ ও রাতে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পার্কটি।
বর্ষাকালে কাদা আর গ্রীষ্মকালে ধুলোবালিতে পার্কটির অবস্থা বেহাল। এছাড়া স্থানীয় লোকজন পার্কটির দেয়াল ঘেষে নির্মান সামগ্রী, ময়লা আবর্জনা স্তুপ করে রাখায় ধুলোবালি ও নোংরা পরিবেশ যেন বিষিয়ে তুলছে পার্কটির পরিবেশ।
বিভিন্ন সময়ে উক্ত পার্ক নিয়ে লেখালেখি ও আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান উক্ত পার্কটি শেখ রাসেল শিশুপার্ক নামে দিয়ে সংস্কার কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তাও কোন কারনে থমকে আছে।
জানা যায় ২০০৫ সালের ১৪ অক্টোবর তৎকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মরহুম জিয়াউল হক জিয়া পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর পার্কের ভিতরে নির্মান করা হয় পাকা বেঞ্চ, দোলনা, লেক- লোহার ব্রীজসহ শিশুদের খেলার সামগ্রী । সেই সাথে পার্কটিতে বিভিন্ন জাতের ফুল-ফল ও কাঠগাছ লাগানো হয়। বর্তমানে পার্কে লাগানো লাখ লাখ টাকার ফুল-ফল ও কাঠগাছগুলোর অস্তিত্ব নেই। পুরো মাঠ এখন বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে। বাচ্চাদের জন্য তৈরিকৃত একটা খেলনারও অস্তিত্ব নেই। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পার্কটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
শিশুপার্কটি রক্ষায় স্থানীয় বেশ কয়েকটি স্বেচ্চাসেবি সংগঠনসহ সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবি লোকজন পার্কটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করলে ২০২০ ইং সনে পার্কের দেয়াল কারুকার্য, নতুন তোরণ নির্মান ও দুইটি স্থায়ী ড্রাগন নির্মান করেন। আশার আলো দেখেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু তাদের এ আনন্দ বেশিদিন থাকেনি। অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই লাপাত্তা হয়ে যান, লোপাট করা হয় সরকারি অর্থ। সেই সাথে শিশুপার্কটি এখন স্থানীয়দের খেলার মাঠ ছাড়া আর কিছুই না। স্থানীয়দের দাবী লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মহোদয় যদি শিশুপার্কটি সংষ্কারে একটু আন্তরিক হয়, তাহলে উপজেলাবাসীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র রামগঞ্জ শিশুপার্কটি আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।