১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কয়রায় তরমুজ চাষে লাভবান : কৃষকের সুদিন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৮৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

খুলনা সংবাদদাতা :

খুলনার কয়রায় চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড ভঙ্গ করে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছে জনপদের কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষীরা লাভবান হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কৃষকের মনে সীমাহীন আনন্দ ভরে উঠেছে।
এ বছর উপজেলায় ২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। প্রতি এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৫৫হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। এ অঞ্চলের তরমুজের বাজারমূল্য ৭৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদিত এসব তরমুজ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক। গত বছরের বৃষ্টিতে তরমুজ চাষের ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভবান হবেন বলে চাষিরা মনে করছেন। উপকূলীয় এ উপজেলায় লবণপানি, বেড়ীবাঁধের মধ্যে মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি করে বিভিন্ন ইউনিয়ানে তরমুজের চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর তরমুজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪ শত ৪৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ফলন ৩৮ থেকে ৪২ টন। মোট ফলন ৫৪ হাজার ৯১০টন। যার বাজার মূল্য ৭৬ কোটি ৮৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বেশী হবে। কয়রার ৭টি ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করা হয়েছে ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে আমাদী ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের চান্নিরচক, বগুড়ারচক, আমিরপুর, হাতিয়ার ডাঙ্গা,হরিকাটি, চন্ডিপুর, খেওনা, পাটনিখালি, মসজিদকুড়, নাকসা, ভান্ডারপোল সহ অন্যান্য ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ তরমুজ ক্ষেত। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে জড়ো করে রেখেছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা তরমুজ কিনতে ক্ষেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দরদাম করে ক্ষেত কিনে নিচ্ছেন। এই তরমুজ ক্ষেত থেকে ট্রলি বোঝাই করে ট্রাক ও কার্গ ভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ট্রলিতে করে এনে ট্রাক ও কার্গ লোড করছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাত করার জন্য ব্যস্ত চাষি ও ব্যাপারীরা। কেউ ক্ষেত হিসাবে তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউবা পাইকারি বাজারে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ তরমুজ ক্ষেত বিক্রি হয়ে গেছে। ১০ শতাংশ তরমুজ কৃষকের ক্ষেতে রয়েছে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ শত ট্রাক তরমুজ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, বিগত বছরে তরমুজ চাষে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তবে অনাবৃষ্টির কারণে পানি দিতে অধিক টাকা খরচ হয়েছে। বাগালী ইউনিয়নের চটকাতলা গ্রামের কৃষক এবাদুল মিস্ত্রী বলেন,আমার বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
আমাদী ইউনিয়নের হরিকাটি গ্রামের কুমারেশ বাবু বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার খরচ বাদে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে মিষ্টি পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তরমুজ চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এসব এলাকায় খাল খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে পারলে তরমুজের চাষ আরও বাড়ানো যেত। এখন পর্যন্ত বাজারে তরমুজের দাম সন্তোষজনক। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেতের ৯০ ভাগ তরমুজ বিক্রি হয়ে গেছে। এ বছর বাম্পার ফলনে লাভবান হওয়ায় আগামীতে তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

কয়রায় তরমুজ চাষে লাভবান : কৃষকের সুদিন

আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

খুলনা সংবাদদাতা :

খুলনার কয়রায় চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড ভঙ্গ করে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছে জনপদের কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় তরমুজের বাম্পার ফলনে চাষীরা লাভবান হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কৃষকের মনে সীমাহীন আনন্দ ভরে উঠেছে।
এ বছর উপজেলায় ২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। প্রতি এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৫৫হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। এ অঞ্চলের তরমুজের বাজারমূল্য ৭৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদিত এসব তরমুজ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক। গত বছরের বৃষ্টিতে তরমুজ চাষের ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভবান হবেন বলে চাষিরা মনে করছেন। উপকূলীয় এ উপজেলায় লবণপানি, বেড়ীবাঁধের মধ্যে মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি করে বিভিন্ন ইউনিয়ানে তরমুজের চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর তরমুজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৪ শত ৪৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ফলন ৩৮ থেকে ৪২ টন। মোট ফলন ৫৪ হাজার ৯১০টন। যার বাজার মূল্য ৭৬ কোটি ৮৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বেশী হবে। কয়রার ৭টি ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করা হয়েছে ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে আমাদী ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের চান্নিরচক, বগুড়ারচক, আমিরপুর, হাতিয়ার ডাঙ্গা,হরিকাটি, চন্ডিপুর, খেওনা, পাটনিখালি, মসজিদকুড়, নাকসা, ভান্ডারপোল সহ অন্যান্য ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ তরমুজ ক্ষেত। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে জড়ো করে রেখেছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা তরমুজ কিনতে ক্ষেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দরদাম করে ক্ষেত কিনে নিচ্ছেন। এই তরমুজ ক্ষেত থেকে ট্রলি বোঝাই করে ট্রাক ও কার্গ ভর্তি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ট্রলিতে করে এনে ট্রাক ও কার্গ লোড করছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাত করার জন্য ব্যস্ত চাষি ও ব্যাপারীরা। কেউ ক্ষেত হিসাবে তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউবা পাইকারি বাজারে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ তরমুজ ক্ষেত বিক্রি হয়ে গেছে। ১০ শতাংশ তরমুজ কৃষকের ক্ষেতে রয়েছে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ শত ট্রাক তরমুজ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, বিগত বছরে তরমুজ চাষে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তবে অনাবৃষ্টির কারণে পানি দিতে অধিক টাকা খরচ হয়েছে। বাগালী ইউনিয়নের চটকাতলা গ্রামের কৃষক এবাদুল মিস্ত্রী বলেন,আমার বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
আমাদী ইউনিয়নের হরিকাটি গ্রামের কুমারেশ বাবু বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার খরচ বাদে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে মিষ্টি পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তরমুজ চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এসব এলাকায় খাল খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে পারলে তরমুজের চাষ আরও বাড়ানো যেত। এখন পর্যন্ত বাজারে তরমুজের দাম সন্তোষজনক। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেতের ৯০ ভাগ তরমুজ বিক্রি হয়ে গেছে। এ বছর বাম্পার ফলনে লাভবান হওয়ায় আগামীতে তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন