১১:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কয়রায় সূর্যমুখী চাষে সাফল্য লাভের প্রত্যাশায় কৃষকরা

মোক্তার হোসেন :
  • আপডেট সময় : ০৯:১৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • / ১২৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোক্তার হোসেন :

খুলনার দক্ষিণ অঞ্চল কয়রার কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তারা আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর পর্যাপ্ত লাভ পাবেন। উপকূলীয় লবনাক্ততার মধ্যেও সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনায় কমবেশি হলুদ সূর্যমুখী ফুল শোভা পাচ্ছে। একদিকে সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ ও প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, গত মৌসুমে খুলনা অঞ্চলে ২হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়।মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হলে আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ সম্ভব হতো। সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার ও বীজ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন মুখরিত হয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন।
এ উপজেলার হরিকাটি গ্রামের কৃষক শিবপদ মন্ডল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ২বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুল ভালো হয়েছ। প্রায় প্রতিটি গাছেই বড় ফুল ধরেছে।
কয়রা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক মিরন বাবু জানান, চলতি রবি মৌসুমে তিনি ১বিঘা জমিতে হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। খেতের অধিকাংশ গাছেই ফুল বড় হয়েছে। গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয় তার।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। হাইসান, এফ-১ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে প্রায় আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৪থেকে ৫হাজার টাকা।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সূর্যমুখী লবন সহিঞ্চু। উপকূলে লবনাক্ততার মধ্যে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ১হাজার ৭০০ জন কৃষককে ১কেজি করে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। কয়রা উপজেলায় এ বছর ২২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপকূলের লবনাক্ত এ উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

কয়রায় সূর্যমুখী চাষে সাফল্য লাভের প্রত্যাশায় কৃষকরা

আপডেট সময় : ০৯:১৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোক্তার হোসেন :

খুলনার দক্ষিণ অঞ্চল কয়রার কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তারা আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর পর্যাপ্ত লাভ পাবেন। উপকূলীয় লবনাক্ততার মধ্যেও সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনায় কমবেশি হলুদ সূর্যমুখী ফুল শোভা পাচ্ছে। একদিকে সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ ও প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, গত মৌসুমে খুলনা অঞ্চলে ২হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়।মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হলে আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ সম্ভব হতো। সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার ও বীজ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন মুখরিত হয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন।
এ উপজেলার হরিকাটি গ্রামের কৃষক শিবপদ মন্ডল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ২বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুল ভালো হয়েছ। প্রায় প্রতিটি গাছেই বড় ফুল ধরেছে।
কয়রা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক মিরন বাবু জানান, চলতি রবি মৌসুমে তিনি ১বিঘা জমিতে হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। খেতের অধিকাংশ গাছেই ফুল বড় হয়েছে। গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয় তার।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। হাইসান, এফ-১ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে প্রায় আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৪থেকে ৫হাজার টাকা।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সূর্যমুখী লবন সহিঞ্চু। উপকূলে লবনাক্ততার মধ্যে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ১হাজার ৭০০ জন কৃষককে ১কেজি করে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। কয়রা উপজেলায় এ বছর ২২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপকূলের লবনাক্ত এ উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন