১২:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

খুলনায় পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করে চমক দেখালেন: ইউসুফ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৩:২৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৭৮

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোক্তার হোসেন, খুলনা:

পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ইউসুফ ( ৩৫)। ব্যতিক্রমী এ উদ্ভাবন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এলাকায়। ১ মন পলিথিন পুড়িয়ে ২০ কেজি ডিজেল, সাড়ে পাঁচ কেজি পেট্রোল ও আড়াই কেজি অকটেন পাচ্ছেন তিনি। এমনকি অবশিষ্ট গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজও করা যাচ্ছে। এছাড়া পলিথিনের ছাই দিয়ে মেসিনারিজ এ ব্যবহৃত গিরিজ ও ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরির গবেষণা ও করেছেন এই যুবক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যতিক্রমী আবিষ্কারের খবর এক নজরে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ভীড় করছে এলাকার মানুষ। এটার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ইউসুফ।সারেজমিন দেখা যায় ,বড় টিনের ড্রামে পলিথিন ভরে মুখ বন্ধ করে আগুনের তাপ দেওয়া হচ্ছে। তাপে ড্রামের সঙ্গে লাগানো পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা ধোঁয়া বাষ্পীয় পদার্থ পানি ভর্তি একটি ছোট ড্রামের মধ্যে দিয়ে কিছুটা শীতল হয়ে পাইপের সাহায্যে তরল আকারে তিনটি পাত্রে জমা হচ্ছে । আর বাকি ধোঁয়া অন্য একটি পাইপের মাধ্যমে টিনের ড্রামের তলে আগুন জ্বলছে। ফলে পলিথিন পোড়াতে তার বাড়তি কোন জ্বালানি লাগছে না। প্রথমে কাঠ দিয়ে সামান্য কিছুক্ষণ জ্বালানোর পর বাকি সময় উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে তাপ দিতে দেখা গেছে। মূলত প্রথমে তাপের মাধ্যমে,বাষ্প তৈরি ,আর বাষ্প পানির মাধ্যমে শীতল করে তরল পদার্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে ।পরে ওই তরল পদার্থ রিফাইন মেশিনের মাধ্যমে তিনটি আলাদা আলাদা পাত্রে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল আকারে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে।ইউসুফ বলেন, আমি ইউটিউবের মাধ্যমে ৭/ ৮ মাস আগে জানতে পারি পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যাচ্ছে । মেশিন তৈরি সম্পর্কে চায়নাদের বেশ কিছু ভিডিও দেখি। পরবর্তীতে আরো খোঁজ খবর নিয়ে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বাড়িতে মেশিন তৈরি করে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করি। তেল পেয়ে নিজের মোটরসাইকেল ও শ্যালো মেশিনে ব্যবহার করি। সফল হওয়ার পরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে একবারে ১৪/১৫ লিটার তেল উৎপাদনকারী একটি মেশিন তৈরি করি।তিনি আরো বলেন, এখন প্রতি সপ্তাহে দু,বার উৎপাদন করছি। উৎপাদিত অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করছি। আর ডিজেল আমার নিজের শ্যালো মেশিনে ব্যবহার করছি।ইউসুফ আর ও জানান, পলিথিন পুড়ানোর সময় কোন ধোঁয়া ড্রাম থেকে বাইরে বের হতে পারে না । এই ধোঁয়া তরল করে রিফাইনের মাধ্যমে তেল উৎপাদন করছি। এজন্য পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার কোন শঙ্কা নেই। বরং একদিকে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পলিথিনের ক্ষতি থেকে প্রকৃতির রক্ষা পাবে। অন্যদিকে দেশে চলমান জ্বালানি তেলের সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে।স্হানীয় আমিরুল ইসলাম গাজী, রাকিব ও সেলিম বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কাজটি অবশ্যই ভালো। এখানে উৎপন্ন জ্বালানি তেল দিয়ে মোটরসাইকেল ভালোভাবে চলছে। একদিকে সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের চাহিদা মিটছে। অন্যদিকে আত্ম কর্মসংস্থান হচ্ছে।স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম ফকির বলেন, ইউসুফ দারিদ্রতার কারণে তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। তবে ছোটবেলা থেকে গবেষণা করে, বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছেন ।চীন দেশের মেশিন ইউটিউব দেখে নিজ বাড়িতে সব তৈরি করছেন। এটা আমাদের গর্বের বিষয়।স্থানীয়, ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ইউসুফের প্রযুক্তিগত মেধা খুব প্রখর। আমাদের প্রত্যন্ত এলাকায় জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে এটা সত্যি প্রশংসনীয়। আর্থিক সাপোর্ট পেলে তিনি ভালো কিছু করতে পারবেন ।বড় পরিসরে করতে পারলে দেশের জ্বালানির, চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানের ও সুযোগ তৈরি হবে।খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি পরিবেশের ক্ষতিকর কিনা, খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো। এধরনের উদ্দোগ খুবই ভালো। তবে এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। আর যদি সঠিক পদ্ধতিতে এই কাজটি করা হয় তবে আমাদের জন্য ক্ষতিকর না ।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

খুলনায় পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করে চমক দেখালেন: ইউসুফ

আপডেট সময় : ০৩:২৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মোক্তার হোসেন, খুলনা:

পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন করছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ইউসুফ ( ৩৫)। ব্যতিক্রমী এ উদ্ভাবন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এলাকায়। ১ মন পলিথিন পুড়িয়ে ২০ কেজি ডিজেল, সাড়ে পাঁচ কেজি পেট্রোল ও আড়াই কেজি অকটেন পাচ্ছেন তিনি। এমনকি অবশিষ্ট গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজও করা যাচ্ছে। এছাড়া পলিথিনের ছাই দিয়ে মেসিনারিজ এ ব্যবহৃত গিরিজ ও ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরির গবেষণা ও করেছেন এই যুবক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যতিক্রমী আবিষ্কারের খবর এক নজরে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ভীড় করছে এলাকার মানুষ। এটার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ইউসুফ।সারেজমিন দেখা যায় ,বড় টিনের ড্রামে পলিথিন ভরে মুখ বন্ধ করে আগুনের তাপ দেওয়া হচ্ছে। তাপে ড্রামের সঙ্গে লাগানো পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসা ধোঁয়া বাষ্পীয় পদার্থ পানি ভর্তি একটি ছোট ড্রামের মধ্যে দিয়ে কিছুটা শীতল হয়ে পাইপের সাহায্যে তরল আকারে তিনটি পাত্রে জমা হচ্ছে । আর বাকি ধোঁয়া অন্য একটি পাইপের মাধ্যমে টিনের ড্রামের তলে আগুন জ্বলছে। ফলে পলিথিন পোড়াতে তার বাড়তি কোন জ্বালানি লাগছে না। প্রথমে কাঠ দিয়ে সামান্য কিছুক্ষণ জ্বালানোর পর বাকি সময় উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে তাপ দিতে দেখা গেছে। মূলত প্রথমে তাপের মাধ্যমে,বাষ্প তৈরি ,আর বাষ্প পানির মাধ্যমে শীতল করে তরল পদার্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে ।পরে ওই তরল পদার্থ রিফাইন মেশিনের মাধ্যমে তিনটি আলাদা আলাদা পাত্রে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল আকারে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে।ইউসুফ বলেন, আমি ইউটিউবের মাধ্যমে ৭/ ৮ মাস আগে জানতে পারি পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা যাচ্ছে । মেশিন তৈরি সম্পর্কে চায়নাদের বেশ কিছু ভিডিও দেখি। পরবর্তীতে আরো খোঁজ খবর নিয়ে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বাড়িতে মেশিন তৈরি করে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করি। তেল পেয়ে নিজের মোটরসাইকেল ও শ্যালো মেশিনে ব্যবহার করি। সফল হওয়ার পরে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে একবারে ১৪/১৫ লিটার তেল উৎপাদনকারী একটি মেশিন তৈরি করি।তিনি আরো বলেন, এখন প্রতি সপ্তাহে দু,বার উৎপাদন করছি। উৎপাদিত অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি করছি। আর ডিজেল আমার নিজের শ্যালো মেশিনে ব্যবহার করছি।ইউসুফ আর ও জানান, পলিথিন পুড়ানোর সময় কোন ধোঁয়া ড্রাম থেকে বাইরে বের হতে পারে না । এই ধোঁয়া তরল করে রিফাইনের মাধ্যমে তেল উৎপাদন করছি। এজন্য পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার কোন শঙ্কা নেই। বরং একদিকে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পলিথিনের ক্ষতি থেকে প্রকৃতির রক্ষা পাবে। অন্যদিকে দেশে চলমান জ্বালানি তেলের সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে।স্হানীয় আমিরুল ইসলাম গাজী, রাকিব ও সেলিম বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কাজটি অবশ্যই ভালো। এখানে উৎপন্ন জ্বালানি তেল দিয়ে মোটরসাইকেল ভালোভাবে চলছে। একদিকে সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের চাহিদা মিটছে। অন্যদিকে আত্ম কর্মসংস্থান হচ্ছে।স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম ফকির বলেন, ইউসুফ দারিদ্রতার কারণে তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। তবে ছোটবেলা থেকে গবেষণা করে, বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছেন ।চীন দেশের মেশিন ইউটিউব দেখে নিজ বাড়িতে সব তৈরি করছেন। এটা আমাদের গর্বের বিষয়।স্থানীয়, ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ইউসুফের প্রযুক্তিগত মেধা খুব প্রখর। আমাদের প্রত্যন্ত এলাকায় জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে এটা সত্যি প্রশংসনীয়। আর্থিক সাপোর্ট পেলে তিনি ভালো কিছু করতে পারবেন ।বড় পরিসরে করতে পারলে দেশের জ্বালানির, চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানের ও সুযোগ তৈরি হবে।খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি পরিবেশের ক্ষতিকর কিনা, খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো। এধরনের উদ্দোগ খুবই ভালো। তবে এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। আর যদি সঠিক পদ্ধতিতে এই কাজটি করা হয় তবে আমাদের জন্য ক্ষতিকর না ।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন