০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, ব্যবস্থা নেই!

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৭:১৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ১২৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ:

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডে অবস্থিত প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল। নানা রোগে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় হাসপাতালটিতে যান আশপাশসহ দূরদূরান্তের মানুষজন। তবে সেবার চেয়ে হয়রানির করার অভিযোগ বেশি তাদের বিরুদ্ধে। ডাক্তারদের ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। হাতেগোনা দু’একটি ভুলই নয়, রয়েছে অভিযোগের পাড়ার। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
মহামারী করোনা ভাইরাস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আগে উদ্বোধন হয় এই হাসপাতালের। ভেতরের চাকচিক্যময় ডেকোরেশন দেখে বোঝার উপায় নেই চিকিৎসার মান খারাপ হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে রোগীদের আইসিইউ সেবা পাওয়ার সুযোগ এখানে বেশি। কেননা তথ্যমতে আরও দুটি হাসপাতালে আইসিইউ থাকলেও সেবার হার কম রয়েছে। এদিকে শুরুর পর থেকেই চিকিৎসা সেবায় নানা বিতর্কের সম্মুখীন হন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে একাধিকবার সাময়িক সময়ে জন্যে বন্ধ রাখা হয়েছিল হাসপাতালকে। তবে, ফের চালু হলেও শুধরায়নি হর্তাকর্তারা। এদের ভূল চিকিৎসা থেকে রক্ষা পাননি ছোট্ট নবজাতক শিশুও।

অনুসন্ধানে করতে গিয়ে কথা হয় একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে। তারা হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়ে জানিয়েছেন হয়রানির কথা। বললেন, হাসপাতাল কতৃপক্ষ ওইখানে ভর্তি হওয়া স্বাভাবিক রোগীদের স্বজনদের ভয় দেখিয়ে আইসিইউ ও এনআইসিও ও এইচডিওতে ভর্তি করতে বাধ্য করে থাকেন। রোগী ভর্তি হলেই ধরিয়ে দেয়া হয় মোটা অংকের বিলের কাগজ। যা নিন্মবিত্তের জন্যে পরিশোধে কষ্টকর বিষয়ে ধারায়।

মর্মমান্তিক ঘটনার শিকার হন এ বছরের ২২ জুনে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণ নবজাতককে ভর্তি করানো এক দম্পতি। ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে জাহিদুল হাসান নামের এক চিকিৎসক নবজাতককে লাইফ সাপোর্টে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে লাইফ সাপোর্টে তাকে সি-পাপ নামক মেশিন গালানোকালে নাকের পর্দা ও জোড়া ছিঁড়ে যায়। সেসময় নবজাতকের সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনা লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করেছিল রোগীর বাবা রাসেল সরকার।

যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক।

ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর হয়েছে ফারজানা আক্তারের দাবি তার স্বামী রুহুল আমীনের। তাদের সঙ্গে কি নির্মমতা হন তা জানিয়েছেন ঢাকা টাইমসকে। তিনি বলে, ২৩ ডিসেম্বর শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফারজানা আক্তারের ঠান্ডার কারণে বুকে ব্যথা উঠলে তাকে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা হার্টে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে তাৎক্ষণিক দুটি ইনজেকশন দেয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ফারজানা আক্তারকে আইসিইউতে নিয়ে আরও ১০টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ফারজানা মারা যান। ওইদিনে মাত্র ১ ঘন্টায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
মামলা কেনো করলেন না জানতে চাইলে রুহুল আমীন জানান, মামলা করলে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। তার মেয়েরা তাদের মায়ের এমন মরদেহ সহ্য করতে পারবে না। তাই তারা মামলা করেনি। বর্তমানে তার দুটি মেয়ে সর্বক্ষণ কান্নায় চোখ ভিজিয়ে রাখেন মায়ের জন্য।

হাসপাতালে হয়রানির শিকার হওয়া সোনারগাঁওয়ের সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন রতন জানিয়েছেন, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে তার শ্বাশুড়িকে কিডনি জনিত রোগে ওই হাসপাতালে নিয়েন যান। তার শ্বাশুড়িকে ডায়ালাইসিস নিয়মিত করানো লাগে। গভীর রাতে তারা রোগীকে সেখানে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ সাধারণ বেডে না নিয়ে জোরপূর্বক আইসিইউতে ঢুকিয়েছেন। অথচ এর পূর্বেও অসংখ্যবার মাত্র ৩৩’শ টাকায় তিনি ডায়ালাউসিস করিয়েছেন। একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে তাদের জুলুমের শিকার হন তিনি। এক রাতেই তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো ৩৩ হাজার টাকার বিল।
তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রবেশ করলেই ম্যানেজারসহ অন্যান্য সদস্যরা রোগীর সঙ্গে থাকা মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক আইসিইউতে ভর্তি করাতে বাধ্য করেন।
মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সালাম নামের আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, তার বাড়ির ভাড়াটিয়াকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। ইমার্জেন্সি রোগী হওয়া ডাক্তার তাকে এনআইসিইউ রেফারেন্স করে। রোগীর অবস্থা খারাপ হবার কারণে তারাও রাজি হন। তবে, হাসপাতাল কতৃপক্ষের সরাসরি কথা ভর্তির জন্যে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া লাগবে। এদিকে গভীর রাত হওয়ায় টাকা ম্যানেজ করা কষ্টের হয়ে যান। অনেক আকুতি মিনতি করাতেও মন গলেনি তাদের।
হাসপাতালকে কসাইখানা উপাধি দিয়ে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মী শরিফুল ইসলাম তনয় বলেছেন,তিনি একাধিকবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার ছোট ভাইয়ের কানে একটি পুতি ঢুকে গেলে তাকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। সেখানে যাওয়ার পর ইমার্জেন্সি থেকে বলা হয় তারা তা বের করতে পারবেন। তবে, টাকা লাগবে ২ হাজার টাকা। তাদের কথা অনুযায়ী রাজি হওয়ার পরও ওই হাসপালের কয়েকজন নার্সরা তার ভাইকে কষ্ট দিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে পুতিটি বের করতে ব্যর্থ হয়ে পেরে ঢাকা মেডিকেল রেফার করে। পরে ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যান।

তিনি আরও বলে, এক গভীর রাতে তার এক আত্মীয় ইমার্জেন্সি রোগীকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গেলে তারা আইসিইউতে নেয়ার কথা বলে। একপর্যায়ে সেখানে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় পরিবার রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবে বলাতেই কয়েকঘন্টায় ১০ হাজার টাকা বিল বানানো হয়।

এতো অভিযোগের বিষয়ে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: রাশিদুল ইসলাম জানান, প্রথম কথা সাংবাদিককে ফোনে বক্তব্য দেয়া আইডেন্টিটি এবং ডেজিগনেশন আমার না। আমি নিচু লেভেলে চাকরি করি। আপনি যদি কোনো তথ্য জানতে চান সরাসরি এসে কথা বললে তথ্য জানা যাবে। ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসা প্রশ্নে আমি বলবো ভুল চিকিৎসা বললেই তো আর হয় না ওইটা মেডিক্যালের পার্ট। এটা ডাক্তাররা ভালো বলতে পারবেন।
জোরপূর্বক আইসিইউতে ঢুকানোর বিষয়ে তিনি জানান, আইসিইউতে যে রোগী যায় তাকে জোরপূর্বক নেয়ার সুযোগ নেই। রোগী এবং স্বজনের বন সই নিয়েই ঢুকানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সড়কের দুর্ঘটনায় অসুস্থ হওয়া ইমারজেন্সি অনেক রোগী থাকে যাদের আত্মায়স্বজন খুজে পাওয়া যায় না তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
চিকিৎসা সেবায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে বলেছেন, ইউরোপিয়ান ও এলবোডিং ইনজেকশন অথবা যাবতীয় ঔষধে হয়তো খরচ বেশি হয়। আমি দেখেছি বিআরবি অথবা স্কয়ারে একদিনে দেড় লাখ টাকাও বিল হয়। তবে আমাদেরটা বিআরবি না, তাই আমি এটার সঠিক উত্তর দিতে পারবো না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, মূলত প্রতিটি হাসপাতালই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই অপারেশনটা চালিয়ে থাকেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, প্রো-অ্যাকটিভের যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা এগুলোর কোয়ালিটি ভালো রয়েছে। তবে, রোগীদের থেকে বেশি অর্থ নেয়ার কথা না।কেননা একটি নির্দিষ্ট রেট আছে। বেশি টাকা আদায়ের যদি কেউ অভিযোগ দেয় আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। গত ২৩ ডিসেম্বর একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে ওই হাসপাতালে ওইটা নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আসলে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা আমাদের বিষয়গুলো জানান কিন্তু কোনো ভুক্তভোগী জানায়নি। যদি কোনো ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে তাহলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু আমরা পত্রিকার নিউজের উপর ভিত্তি করে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে একটি জিডি এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। আপনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাথে কথা বলুন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

সিদ্ধিরগঞ্জের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, ব্যবস্থা নেই!

আপডেট সময় : ০৭:১৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রতিদিনের নিউজ:

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডে অবস্থিত প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল। নানা রোগে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় হাসপাতালটিতে যান আশপাশসহ দূরদূরান্তের মানুষজন। তবে সেবার চেয়ে হয়রানির করার অভিযোগ বেশি তাদের বিরুদ্ধে। ডাক্তারদের ভূল চিকিৎসায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। হাতেগোনা দু’একটি ভুলই নয়, রয়েছে অভিযোগের পাড়ার। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
মহামারী করোনা ভাইরাস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আগে উদ্বোধন হয় এই হাসপাতালের। ভেতরের চাকচিক্যময় ডেকোরেশন দেখে বোঝার উপায় নেই চিকিৎসার মান খারাপ হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে রোগীদের আইসিইউ সেবা পাওয়ার সুযোগ এখানে বেশি। কেননা তথ্যমতে আরও দুটি হাসপাতালে আইসিইউ থাকলেও সেবার হার কম রয়েছে। এদিকে শুরুর পর থেকেই চিকিৎসা সেবায় নানা বিতর্কের সম্মুখীন হন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে একাধিকবার সাময়িক সময়ে জন্যে বন্ধ রাখা হয়েছিল হাসপাতালকে। তবে, ফের চালু হলেও শুধরায়নি হর্তাকর্তারা। এদের ভূল চিকিৎসা থেকে রক্ষা পাননি ছোট্ট নবজাতক শিশুও।

অনুসন্ধানে করতে গিয়ে কথা হয় একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে। তারা হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়ে জানিয়েছেন হয়রানির কথা। বললেন, হাসপাতাল কতৃপক্ষ ওইখানে ভর্তি হওয়া স্বাভাবিক রোগীদের স্বজনদের ভয় দেখিয়ে আইসিইউ ও এনআইসিও ও এইচডিওতে ভর্তি করতে বাধ্য করে থাকেন। রোগী ভর্তি হলেই ধরিয়ে দেয়া হয় মোটা অংকের বিলের কাগজ। যা নিন্মবিত্তের জন্যে পরিশোধে কষ্টকর বিষয়ে ধারায়।

মর্মমান্তিক ঘটনার শিকার হন এ বছরের ২২ জুনে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণ নবজাতককে ভর্তি করানো এক দম্পতি। ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে জাহিদুল হাসান নামের এক চিকিৎসক নবজাতককে লাইফ সাপোর্টে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে লাইফ সাপোর্টে তাকে সি-পাপ নামক মেশিন গালানোকালে নাকের পর্দা ও জোড়া ছিঁড়ে যায়। সেসময় নবজাতকের সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনা লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করেছিল রোগীর বাবা রাসেল সরকার।

যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক।

ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর হয়েছে ফারজানা আক্তারের দাবি তার স্বামী রুহুল আমীনের। তাদের সঙ্গে কি নির্মমতা হন তা জানিয়েছেন ঢাকা টাইমসকে। তিনি বলে, ২৩ ডিসেম্বর শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফারজানা আক্তারের ঠান্ডার কারণে বুকে ব্যথা উঠলে তাকে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা হার্টে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে তাৎক্ষণিক দুটি ইনজেকশন দেয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ফারজানা আক্তারকে আইসিইউতে নিয়ে আরও ১০টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ফারজানা মারা যান। ওইদিনে মাত্র ১ ঘন্টায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
মামলা কেনো করলেন না জানতে চাইলে রুহুল আমীন জানান, মামলা করলে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। তার মেয়েরা তাদের মায়ের এমন মরদেহ সহ্য করতে পারবে না। তাই তারা মামলা করেনি। বর্তমানে তার দুটি মেয়ে সর্বক্ষণ কান্নায় চোখ ভিজিয়ে রাখেন মায়ের জন্য।

হাসপাতালে হয়রানির শিকার হওয়া সোনারগাঁওয়ের সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন রতন জানিয়েছেন, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে তার শ্বাশুড়িকে কিডনি জনিত রোগে ওই হাসপাতালে নিয়েন যান। তার শ্বাশুড়িকে ডায়ালাইসিস নিয়মিত করানো লাগে। গভীর রাতে তারা রোগীকে সেখানে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ সাধারণ বেডে না নিয়ে জোরপূর্বক আইসিইউতে ঢুকিয়েছেন। অথচ এর পূর্বেও অসংখ্যবার মাত্র ৩৩’শ টাকায় তিনি ডায়ালাউসিস করিয়েছেন। একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে তাদের জুলুমের শিকার হন তিনি। এক রাতেই তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো ৩৩ হাজার টাকার বিল।
তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রবেশ করলেই ম্যানেজারসহ অন্যান্য সদস্যরা রোগীর সঙ্গে থাকা মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক আইসিইউতে ভর্তি করাতে বাধ্য করেন।
মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সালাম নামের আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, তার বাড়ির ভাড়াটিয়াকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। ইমার্জেন্সি রোগী হওয়া ডাক্তার তাকে এনআইসিইউ রেফারেন্স করে। রোগীর অবস্থা খারাপ হবার কারণে তারাও রাজি হন। তবে, হাসপাতাল কতৃপক্ষের সরাসরি কথা ভর্তির জন্যে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া লাগবে। এদিকে গভীর রাত হওয়ায় টাকা ম্যানেজ করা কষ্টের হয়ে যান। অনেক আকুতি মিনতি করাতেও মন গলেনি তাদের।
হাসপাতালকে কসাইখানা উপাধি দিয়ে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মী শরিফুল ইসলাম তনয় বলেছেন,তিনি একাধিকবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার ছোট ভাইয়ের কানে একটি পুতি ঢুকে গেলে তাকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। সেখানে যাওয়ার পর ইমার্জেন্সি থেকে বলা হয় তারা তা বের করতে পারবেন। তবে, টাকা লাগবে ২ হাজার টাকা। তাদের কথা অনুযায়ী রাজি হওয়ার পরও ওই হাসপালের কয়েকজন নার্সরা তার ভাইকে কষ্ট দিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে পুতিটি বের করতে ব্যর্থ হয়ে পেরে ঢাকা মেডিকেল রেফার করে। পরে ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যান।

তিনি আরও বলে, এক গভীর রাতে তার এক আত্মীয় ইমার্জেন্সি রোগীকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গেলে তারা আইসিইউতে নেয়ার কথা বলে। একপর্যায়ে সেখানে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় পরিবার রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবে বলাতেই কয়েকঘন্টায় ১০ হাজার টাকা বিল বানানো হয়।

এতো অভিযোগের বিষয়ে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: রাশিদুল ইসলাম জানান, প্রথম কথা সাংবাদিককে ফোনে বক্তব্য দেয়া আইডেন্টিটি এবং ডেজিগনেশন আমার না। আমি নিচু লেভেলে চাকরি করি। আপনি যদি কোনো তথ্য জানতে চান সরাসরি এসে কথা বললে তথ্য জানা যাবে। ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসা প্রশ্নে আমি বলবো ভুল চিকিৎসা বললেই তো আর হয় না ওইটা মেডিক্যালের পার্ট। এটা ডাক্তাররা ভালো বলতে পারবেন।
জোরপূর্বক আইসিইউতে ঢুকানোর বিষয়ে তিনি জানান, আইসিইউতে যে রোগী যায় তাকে জোরপূর্বক নেয়ার সুযোগ নেই। রোগী এবং স্বজনের বন সই নিয়েই ঢুকানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সড়কের দুর্ঘটনায় অসুস্থ হওয়া ইমারজেন্সি অনেক রোগী থাকে যাদের আত্মায়স্বজন খুজে পাওয়া যায় না তাদের আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
চিকিৎসা সেবায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে বলেছেন, ইউরোপিয়ান ও এলবোডিং ইনজেকশন অথবা যাবতীয় ঔষধে হয়তো খরচ বেশি হয়। আমি দেখেছি বিআরবি অথবা স্কয়ারে একদিনে দেড় লাখ টাকাও বিল হয়। তবে আমাদেরটা বিআরবি না, তাই আমি এটার সঠিক উত্তর দিতে পারবো না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, মূলত প্রতিটি হাসপাতালই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই অপারেশনটা চালিয়ে থাকেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, প্রো-অ্যাকটিভের যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা এগুলোর কোয়ালিটি ভালো রয়েছে। তবে, রোগীদের থেকে বেশি অর্থ নেয়ার কথা না।কেননা একটি নির্দিষ্ট রেট আছে। বেশি টাকা আদায়ের যদি কেউ অভিযোগ দেয় আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। গত ২৩ ডিসেম্বর একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে ওই হাসপাতালে ওইটা নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আসলে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা আমাদের বিষয়গুলো জানান কিন্তু কোনো ভুক্তভোগী জানায়নি। যদি কোনো ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে তাহলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু আমরা পত্রিকার নিউজের উপর ভিত্তি করে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে একটি জিডি এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। আপনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাথে কথা বলুন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন