০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ট্রেন-মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা রেলসেতু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৬:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৮১

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা:

নেত্রকোনার চল্লিশা এলাকায় মগড়া নদীর ওপর রেলসেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কয়েকটি গ্রামের লোকজন। আশপাশে নদীর উপর বিকল্প সেতু বা সড়কপথ না থাকায় রেললাইন স্থাপনের পর থেকেই এ রেলসেতুর উপর দিয়েই চলাচলকয়েকটি গ্রামের স্থানীয় এলাকাবাসীসহ শিক্ষার্থীরা। শুধু মানুষই নয়, ঠেলাগাড়িতে করে স্থানীয়রা তাদের উৎপাদিত ধান ও কৃষিপণ্য নিয়েও সেতুটির উপর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের দাবি বিষয়টি তারা জানে না।
বিকল্প কোন সেতু অথবা রাস্তা না থাকায় জেলা সদরের গোপালপুর, বালিজুরী, কার্লি, রাজেন্দ্রপুর, চল্লিশাসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করেন। চল্লিশা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ রেলসেতুটি। রেলসেতুটির পাশে একটি সেতুসহ সংযোগ সড়ক করে দুর্ভোগ কমানোর দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় রাজেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু মন্ডল ও বালিজুরী গ্রামের তাহের মিয়া বলেন, ‘চল্লিশা এলাকার এই রেলসেতুতে কিছু দিন পরপরই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যায়। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রেলসেতু দিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন না। আমারা চাই জরুরি ভিত্তিতে রেলসেতুর পাশে একটি সেতু করে দিলে এই এলাকার মানুষ এ দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পাবে।’
কার্লি গ্রামের কৃষক জজ মিয়া বলেন, ধান কাটা শুরু হলে ঠেলাগাড়ি করে ধান নিয়ে কয়েক মাইল ঘুরে নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। তাছাড়া যাওয়ার মতো কোনো ভাল রাস্তাও নেই। তাই আমরা কৃষকরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধান কেটে ঠেলাগাড়িতে ভরে রেলসেতুর উপর দিয়ে ঠেলাগাড়ি নিয়ে চলাচল করি। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আগে কয়েকজন মারাও গেছে।
গোপালপুর গ্রামের সুমাইয়া ও কার্লি গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘আমরা অসুস্থ হলেও এই রেল সেতু দিয়ে ঠেলাগাড়িতে করে হাসপাতালে যেতে হয়। গর্ভবর্তী নারীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। দেশের এতো উন্নয়ন হলো কিন্তু মনের দুঃখ আমাদের যাতায়াতের জন্য একটা সেতু হলো না। আমরা খুব দুর্ভোগে আছি।’
স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী রুমা আক্তার, লিজা সরকার ও মালিহা আক্তার জানায়, আমাদের স্কুলের সময় হয়ে গেলে ট্রেন চলে আসে। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ক্লাসের সময় চলে যায়। অনেক সময় আমরা রেলসেতুর উপর উঠলে ট্রেন চলে আসে, তখন আমাদের লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যেতে হয়। এতে হাত পায়ে ব্যথা পাই। আমরা স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার সময় খুব ঝুঁকির নিয়ে চলাচল করি।
রেল কর্তৃপক্ষের তথ্যসূত্রে জানাযায়,, বৃটিশ আমলে (১৯২৫-১৯২৭) সালের দিকে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল রেলপথ স্থাপন করা হয়। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত এখন ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ও ‘হাওর এক্সপ্রেস’ সহ ২টি আন্তঃনগর ও একটি কমিউটার ট্রেন ও ২টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে এই রেলপথ দিয়ে। এরপর (১৯৪৮-৪৯) সালের দিকে জমি অধিগ্রহণ করে শ্যামগঞ্জ জংশন, জালশুকা, পূর্বধলা, জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল, হিরণপুর, চল্লিশানগর, নেত্রকোনা বড় স্টেশন, নেত্রকোনা কোর্ট স্টেশন, বাংলা, ঠাকুরাকোনা, বারহাট্টা, অতিথপুর ও মোহনগঞ্জে স্টেশন স্থাপন করা হয়।
নেত্রকোনা বড় স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেল সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মানুষসহ মালামাল নিয়ে ঠেলাগাড়ি পার হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

ট্রেন-মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা রেলসেতু

আপডেট সময় : ০৫:৩৬:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা:

নেত্রকোনার চল্লিশা এলাকায় মগড়া নদীর ওপর রেলসেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কয়েকটি গ্রামের লোকজন। আশপাশে নদীর উপর বিকল্প সেতু বা সড়কপথ না থাকায় রেললাইন স্থাপনের পর থেকেই এ রেলসেতুর উপর দিয়েই চলাচলকয়েকটি গ্রামের স্থানীয় এলাকাবাসীসহ শিক্ষার্থীরা। শুধু মানুষই নয়, ঠেলাগাড়িতে করে স্থানীয়রা তাদের উৎপাদিত ধান ও কৃষিপণ্য নিয়েও সেতুটির উপর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের দাবি বিষয়টি তারা জানে না।
বিকল্প কোন সেতু অথবা রাস্তা না থাকায় জেলা সদরের গোপালপুর, বালিজুরী, কার্লি, রাজেন্দ্রপুর, চল্লিশাসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করেন। চল্লিশা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ রেলসেতুটি। রেলসেতুটির পাশে একটি সেতুসহ সংযোগ সড়ক করে দুর্ভোগ কমানোর দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় রাজেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু মন্ডল ও বালিজুরী গ্রামের তাহের মিয়া বলেন, ‘চল্লিশা এলাকার এই রেলসেতুতে কিছু দিন পরপরই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যায়। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রেলসেতু দিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিলেও একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন না। আমারা চাই জরুরি ভিত্তিতে রেলসেতুর পাশে একটি সেতু করে দিলে এই এলাকার মানুষ এ দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পাবে।’
কার্লি গ্রামের কৃষক জজ মিয়া বলেন, ধান কাটা শুরু হলে ঠেলাগাড়ি করে ধান নিয়ে কয়েক মাইল ঘুরে নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। তাছাড়া যাওয়ার মতো কোনো ভাল রাস্তাও নেই। তাই আমরা কৃষকরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধান কেটে ঠেলাগাড়িতে ভরে রেলসেতুর উপর দিয়ে ঠেলাগাড়ি নিয়ে চলাচল করি। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আগে কয়েকজন মারাও গেছে।
গোপালপুর গ্রামের সুমাইয়া ও কার্লি গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘আমরা অসুস্থ হলেও এই রেল সেতু দিয়ে ঠেলাগাড়িতে করে হাসপাতালে যেতে হয়। গর্ভবর্তী নারীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। দেশের এতো উন্নয়ন হলো কিন্তু মনের দুঃখ আমাদের যাতায়াতের জন্য একটা সেতু হলো না। আমরা খুব দুর্ভোগে আছি।’
স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী রুমা আক্তার, লিজা সরকার ও মালিহা আক্তার জানায়, আমাদের স্কুলের সময় হয়ে গেলে ট্রেন চলে আসে। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ক্লাসের সময় চলে যায়। অনেক সময় আমরা রেলসেতুর উপর উঠলে ট্রেন চলে আসে, তখন আমাদের লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যেতে হয়। এতে হাত পায়ে ব্যথা পাই। আমরা স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার সময় খুব ঝুঁকির নিয়ে চলাচল করি।
রেল কর্তৃপক্ষের তথ্যসূত্রে জানাযায়,, বৃটিশ আমলে (১৯২৫-১৯২৭) সালের দিকে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল রেলপথ স্থাপন করা হয়। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত এখন ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ও ‘হাওর এক্সপ্রেস’ সহ ২টি আন্তঃনগর ও একটি কমিউটার ট্রেন ও ২টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে এই রেলপথ দিয়ে। এরপর (১৯৪৮-৪৯) সালের দিকে জমি অধিগ্রহণ করে শ্যামগঞ্জ জংশন, জালশুকা, পূর্বধলা, জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল, হিরণপুর, চল্লিশানগর, নেত্রকোনা বড় স্টেশন, নেত্রকোনা কোর্ট স্টেশন, বাংলা, ঠাকুরাকোনা, বারহাট্টা, অতিথপুর ও মোহনগঞ্জে স্টেশন স্থাপন করা হয়।
নেত্রকোনা বড় স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেল সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মানুষসহ মালামাল নিয়ে ঠেলাগাড়ি পার হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন