১১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ভূমিহীনের আশ্রয়ণের ঘর পেলেন ধনীরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২
  • / ৬৬

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ,নেত্রকোনা:

নেত্রকোনার বারহাট্টায় ঘুষের টাকার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের মো. গিয়াস উদ্দিন নামের এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের বিরুদ্ধে। ভূমিহীনদের তথ্যমতে জানা গেছে, তিনি জনপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভূমিহীনদের ঘর ধনীদের নামে দিয়েছেন। টাকা দিতে না পারায় প্রকৃত ভূমিহীনদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজে ধনী ব্যক্তিদের ভূমিহীন সনদ দিয়ে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সাহতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চঞ্চল এবং একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
সাহতা ইউনিয়নের বড়গাঁওয়া গ্রামের মোঃ মন্নাফ মিয়া, আমেনা আক্তার ও গোপালপুর গ্রামের আক্কাছ মিয়া জানান, আমরা এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর গত ( ২ নভেম্বর) এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। পরে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে নির্দেশ দেন। বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বড়গাঁওয়া গ্রামের মোঃ মন্নাফ মিয়া, আমেনা আক্তার ও গোপালপুর গ্রামের আক্কাছ মিয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমরা তিনজনই ভূমিহীন। অন্যের বাড়িতে থাকি। আশ্রয়ণের ঘরের জন্য আবেদন করার পর স্থানীয় সাহতা ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিন আমাদের কাছে ঘর প্রতি ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি বলেন, লটারিতে তোমাদের নামে ঘর আসেনি। তাই তোমরা ঘর পবে না। অথচ নিজস্ব বাড়ি ও কৃষিজমি থাকা সত্ত্বেও আমাদের এলাকার প্রশন্ন চন্দ্র বর্মণ ও রতন চন্দ্র বর্মণকে ঘর দেওয়া হয়েছে।’ এ অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়গাঁওয়া গ্রামের কয়েকজন এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, মোঃ মন্নাফ মিয়া কৃষি কাজ করে অন্যের বাড়িতে থেকে জীবনযাপন করেন তবুও তার ভাগ্যে সরকারি ঘর জোটেনি। আমেনা আক্তারও অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন, ভিটে বাড়ি বলতে নিজের কিছুই নেই। কেন তারা সরকারি ঘর পেল না? আমরা এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
অভিযোগকারী মো. মন্নাফ মিয়া ও আক্কাছ মিয়া বলেন, প্রথমে এ বিষয়ে আমরা বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র কাছে অভিযোগ করেছিলাম। অভিযোগ পেয়ে সাহতা ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা বিউটি রানী সাহাকে দিয়ে বিষয়টির তদন্ত করিয়েছেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পরও তিনি তোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।সাহতা ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা বিউটি রানী সাহা তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সরকারি ঘর পাওয়া প্রশন্ন চন্দ্র বর্মণে’র ৫ শতাংশ এবং রতন চন্দ্র বর্মণে’র ১০ শতাংশ বসতবাড়ি আছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া এলাকাবাসী জানান, তিনি ১৫ শতাংশ চাষাবাদের জমি কিনেছেন কিন্তু দলিল করেননি। এমন প্রতিবেদন তিনি দাখিল করেন।
উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যে’র তো সরকারি ঘর দেওয়ার এখতিয়ার নেই। আমার মত জনপ্রিয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য’র বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আর যারা ঘর পেয়েছেন, তারা নিতান্তই গরীব। তারা খেটে খাওয়া মানুষ, দিন আনে দিন খায়। নিজের সংসারই ভালভাবে চলে না, তারা আবার টাকা দিবে কেমন করে। অভিযোগের বিষয়টি ইউএনও মহোদয় নিজে তদন্ত করেছেন কিন্তু কোন সত্যতা পাননি।
এ বিষয়ে উপজেলার সাহতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চঞ্চল বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর তদন্ত হয়েছে। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে, তারা ব্যবস্থা নিবেন।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর আগেও এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছিল। তদন্ত করে সেটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

ভূমিহীনের আশ্রয়ণের ঘর পেলেন ধনীরা

আপডেট সময় : ০৭:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রিপন কান্তি গুণ,নেত্রকোনা:

নেত্রকোনার বারহাট্টায় ঘুষের টাকার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের মো. গিয়াস উদ্দিন নামের এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের বিরুদ্ধে। ভূমিহীনদের তথ্যমতে জানা গেছে, তিনি জনপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভূমিহীনদের ঘর ধনীদের নামে দিয়েছেন। টাকা দিতে না পারায় প্রকৃত ভূমিহীনদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজে ধনী ব্যক্তিদের ভূমিহীন সনদ দিয়ে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সাহতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চঞ্চল এবং একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
সাহতা ইউনিয়নের বড়গাঁওয়া গ্রামের মোঃ মন্নাফ মিয়া, আমেনা আক্তার ও গোপালপুর গ্রামের আক্কাছ মিয়া জানান, আমরা এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর গত ( ২ নভেম্বর) এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। পরে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে নির্দেশ দেন। বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বড়গাঁওয়া গ্রামের মোঃ মন্নাফ মিয়া, আমেনা আক্তার ও গোপালপুর গ্রামের আক্কাছ মিয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমরা তিনজনই ভূমিহীন। অন্যের বাড়িতে থাকি। আশ্রয়ণের ঘরের জন্য আবেদন করার পর স্থানীয় সাহতা ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিন আমাদের কাছে ঘর প্রতি ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি বলেন, লটারিতে তোমাদের নামে ঘর আসেনি। তাই তোমরা ঘর পবে না। অথচ নিজস্ব বাড়ি ও কৃষিজমি থাকা সত্ত্বেও আমাদের এলাকার প্রশন্ন চন্দ্র বর্মণ ও রতন চন্দ্র বর্মণকে ঘর দেওয়া হয়েছে।’ এ অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়গাঁওয়া গ্রামের কয়েকজন এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, মোঃ মন্নাফ মিয়া কৃষি কাজ করে অন্যের বাড়িতে থেকে জীবনযাপন করেন তবুও তার ভাগ্যে সরকারি ঘর জোটেনি। আমেনা আক্তারও অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন, ভিটে বাড়ি বলতে নিজের কিছুই নেই। কেন তারা সরকারি ঘর পেল না? আমরা এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
অভিযোগকারী মো. মন্নাফ মিয়া ও আক্কাছ মিয়া বলেন, প্রথমে এ বিষয়ে আমরা বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র কাছে অভিযোগ করেছিলাম। অভিযোগ পেয়ে সাহতা ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা বিউটি রানী সাহাকে দিয়ে বিষয়টির তদন্ত করিয়েছেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পরও তিনি তোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।সাহতা ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা বিউটি রানী সাহা তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সরকারি ঘর পাওয়া প্রশন্ন চন্দ্র বর্মণে’র ৫ শতাংশ এবং রতন চন্দ্র বর্মণে’র ১০ শতাংশ বসতবাড়ি আছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া এলাকাবাসী জানান, তিনি ১৫ শতাংশ চাষাবাদের জমি কিনেছেন কিন্তু দলিল করেননি। এমন প্রতিবেদন তিনি দাখিল করেন।
উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যে’র তো সরকারি ঘর দেওয়ার এখতিয়ার নেই। আমার মত জনপ্রিয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য’র বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আর যারা ঘর পেয়েছেন, তারা নিতান্তই গরীব। তারা খেটে খাওয়া মানুষ, দিন আনে দিন খায়। নিজের সংসারই ভালভাবে চলে না, তারা আবার টাকা দিবে কেমন করে। অভিযোগের বিষয়টি ইউএনও মহোদয় নিজে তদন্ত করেছেন কিন্তু কোন সত্যতা পাননি।
এ বিষয়ে উপজেলার সাহতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চঞ্চল বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর তদন্ত হয়েছে। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে, তারা ব্যবস্থা নিবেন।
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর আগেও এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছিল। তদন্ত করে সেটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন