১২:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারপ্রাপ্তের ভারে নুয়ে পড়েছে মতলব উত্তরের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:০২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৫৯

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মমিনুল ইসলাম:

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দীর্ঘ ১০মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক, এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে ৭৪টি। এতে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
একরকম নুয়ে পড়েছে গোটা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। এ সমস্যা নিরসনে একটি সুপারিশনামা চলতি মাসে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে উপজেলা কর্মকর্তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন ভূঁঞা অবসরে গেলে এই পদটি শূণ্য হয়। এরপর সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ১৮০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে।
এই বিদ্যালয় গুলোতে সহকারীরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে দীর্ঘদিন ধরে। কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রায় এক যুগ পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ হয়নি। তবে শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় পাঠদানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অভিভাবক নাছির উদ্দিন, হাসান আলী, একরামুল ইসলাম, আজিজার রহমানসহ অনেকে অভিভাবকরা বলেন, শিশুদের লেখাপড়া শেখার জন্য প্রথম ধাপ প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কিন্ত উপজেলার বেশ কিছু বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় কিছু শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক বিদ্যলায় পাঠদানের সুনাম হারাতে বসেছে। যার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলগুলোতে ভর্তি করে দেয়। এমনকি প্রধান শিক্ষক না থাকায় ওই সব স্কুলগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে। অন্যদিকে সুষ্ঠু পরিবেশ ভেঙে পড়ে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কর্মক্রম।
আরও অনেক অভিভাবকরা জানান, উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষাদান ও সুষ্ঠু পাঠদানের পরিবেশ ফিবিয়ে আনতে হলে প্রধান শিক্ষকবিহীন এসব বিদ্যালয়ে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। আর তা না হলে দিন দিন উপজেলার প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, যখন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন শিক্ষক সংকট রেখেই কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধেই ভারপ্রাপ্তের ভার পড়ছে। কিন্ত দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। অন্যদিকে অফিসের বিভিন্ন নিদের্শনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কয়েকবার প্রধান শিক্ষকবিহীন বিদ্যালয়গুলোর তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। তবে তিনি দাবি করেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসের নজরদারি থাকায় প্রধান শিক্ষকবিহীন ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

ভারপ্রাপ্তের ভারে নুয়ে পড়েছে মতলব উত্তরের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা

আপডেট সময় : ১২:০২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মমিনুল ইসলাম:

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দীর্ঘ ১০মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক, এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য আছে ৭৪টি। এতে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
একরকম নুয়ে পড়েছে গোটা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। এ সমস্যা নিরসনে একটি সুপারিশনামা চলতি মাসে শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে উপজেলা কর্মকর্তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন ভূঁঞা অবসরে গেলে এই পদটি শূণ্য হয়। এরপর সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ১৮০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে।
এই বিদ্যালয় গুলোতে সহকারীরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে দীর্ঘদিন ধরে। কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রায় এক যুগ পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ হয়নি। তবে শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক না থাকায় পাঠদানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অভিভাবক নাছির উদ্দিন, হাসান আলী, একরামুল ইসলাম, আজিজার রহমানসহ অনেকে অভিভাবকরা বলেন, শিশুদের লেখাপড়া শেখার জন্য প্রথম ধাপ প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কিন্ত উপজেলার বেশ কিছু বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় কিছু শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক বিদ্যলায় পাঠদানের সুনাম হারাতে বসেছে। যার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলগুলোতে ভর্তি করে দেয়। এমনকি প্রধান শিক্ষক না থাকায় ওই সব স্কুলগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে। অন্যদিকে সুষ্ঠু পরিবেশ ভেঙে পড়ে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কর্মক্রম।
আরও অনেক অভিভাবকরা জানান, উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষাদান ও সুষ্ঠু পাঠদানের পরিবেশ ফিবিয়ে আনতে হলে প্রধান শিক্ষকবিহীন এসব বিদ্যালয়ে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। আর তা না হলে দিন দিন উপজেলার প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, যখন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন শিক্ষক সংকট রেখেই কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধেই ভারপ্রাপ্তের ভার পড়ছে। কিন্ত দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। অন্যদিকে অফিসের বিভিন্ন নিদের্শনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কয়েকবার প্রধান শিক্ষকবিহীন বিদ্যালয়গুলোর তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। তবে তিনি দাবি করেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসের নজরদারি থাকায় প্রধান শিক্ষকবিহীন ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন