ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম
- আপডেট সময় : ০৬:৪৪:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৬৬
ফরিদুর রহমান শামীম:
দেশের স্থানীয় পর্যায়ে অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্ত বাগেরহাটে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে এসে আতঙ্কে থাকতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। পরিষদের ভবনগুলো থেকে খসে পড়ছে সিমেন্ট। যেকোনো সময় ধসে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে ভবনগুলোতে আসেন এলাকাবাসী। বাগেরহাট জেলায় ৭৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ২৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে অন্তত ৯ টি ভবন। পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ এই সকল ভবনে নাগরিক সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন লাখো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। দীর্ঘদিন ধরে সেবা প্রত্যাশীরা বিড়ম্বনার শিকার হলেও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের।
এদিকে জেলা শীর্ষ কর্মকর্তা মো.খালিদ হোসেন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণের বিষয়টি স্বীকার করে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করার কথা জানান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে গিয়ে আতঙ্কে থাকেন এলাকাবাসী। পরিষদের পুরো ভবনই ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এদিকে কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা প্রত্যাশীদের ভিড়। কেউ আসছেন বয়স্ক-বিধবা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে কেউ আবার টিসিবির পণ্য নিতে। আর জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষদের ভিড় লেগেই থাকে সারা বছর। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুধু তেলিগাতি ও বাধাল ইউনিয়ন পরিষদ নয় রায়েন্দা, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, বলইবুনিয়া, গাংনী, কলাতলা, রামচন্দ্রপুর, বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭ টি পরিষদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উল্লখ্য যে ৭নং বাধাল ইউনিয়ন পরিষদ মারাত্নক ঝুকিপূর্ন, দেওয়াল ঘষে পড়ে যে কোন সময় বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে স্থানীয়রা জানান।
এসব ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে মৃত্যু সনদ পর্যন্ত সেবা নিতে আসেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। সোমবার সকালে রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদে শতাধিক মানুষের সমাগম ছিল।
প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে আসা আজাদ কবির বলেন, সেবা নিতে এসে এক দুপুর অপেক্ষা করছি। প্রচুর মানুষের ভিড়ের মধ্যে কোথায় যাব। প্রচণ্ড গরম আমার মত অনেক মানুষ সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
তেলিগাতি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা গ্রহীতা তাসলিমা বেগম বলেন, টিসিবির কার্ড নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। পরিষদের পুরাতন ভবন ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে। এ সমস্যা নিত্যদিনের।
পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করেন তেলিগাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদা আকতার বলেন, পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অনেক কষ্ট করে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গত বছর খুলনা বিভাগের মধ্যে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাই।
বাগেরহাট এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শরিফুজ্জামান বলেন, জেলায় ৭৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও ২৭ টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ও গাংনী পরিষদের নিজস্ব জায়গা নেই।
এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধারা ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।