১০:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ছেলেকে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার মা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
  • / ৬৯

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় রেদোয়ান আহমেদ রাজু (১৪) নামে এক কিশোরকে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মা লিপি আক্তারের বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাজুর মৃত্যু হয়। রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা মা লিপি আক্তারকে আটক করে থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লিপি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর বাবা আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মা লিপি আক্তারকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত রাজু স্থানীয় একটি স্ক্রিন প্রিন্টের কারখানায় কাজ করতো। গত সাত মাস আগে কর্মস্থলে অনিয়মিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত লিপি আক্তার দেওভোগ পাকা রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত লতিফের মেয়ে।

মামলার বাদি নিহত রাজুর রাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পুঁড়িয়ে মারা হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। তার মায়ের উপযুক্ত শাস্তি বাদি করছি। এছাড়াও নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ ন্যায়বিচার দাবি করেন।

মামলায় আনোয়ার উল্লেখ করেন, ১৮ বছর পূর্বে আক্তারের সাথে তার বিয়ে হয়। ১২/১৩ বছর পূর্বে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর মধ্যে তাদের সংসারে রাইয়ান (১৭) ও রাজু (১৪) নামে দুই ছেলের জন্ম হয়। বিচ্ছেদের পর মায়ের কাছেই থাকতো সন্তানেরা।

গত ১৩ নভেম্বর রাতে লিপি অজ্ঞাত দুই তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে রাজুর শয়ন কক্ষে তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে রাজুর ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়। পরে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজুর মৃত্যু হয়।

এদিকে রাজুর মৃত্যুর বিষয়ে এলাকাবাসি ও স্বজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, রাজুর মায়ের পরকীয়া সম্পর্ক দেখে ফেলায় তার মা তাকে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে মেরেছে। আবার কেউ বলছেন, রাজু দীর্ঘ সাত মাস যাবত কাজে না যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মা তাকে হত্যা করেছে। তবে রাজুর মায়ের পরিবারের দাবি, রাজু নিজের গায়ে নিজেই কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে।

নিহত রাজুর খালা মিনু বেগম বলেন, গত তিনদিন আগে আমার বাবা মারা গেছে। আমরা সবাই শোকে পাথর হয়ে গেছি। ঘটনার রাতে রাজু পকেটে ম্যাচ ও কেরোসিন তেল নিয়ে বারান্দায় যায়। এরপর তিনি পাশের রুম থেকে রাজুর চিৎকার শুনতে পান।

তিনি দাবি করেন, কারখানার চাকরি চলে যাওয়ায় মা বকাঝকা করায় রাজু আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে আত্মহত্যার চেষ্টার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান মোল্লা বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত লিপি বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি অধিকতর গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

ছেলেকে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার মা

আপডেট সময় : ০৮:৫৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় রেদোয়ান আহমেদ রাজু (১৪) নামে এক কিশোরকে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মা লিপি আক্তারের বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাজুর মৃত্যু হয়। রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা মা লিপি আক্তারকে আটক করে থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লিপি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর বাবা আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মা লিপি আক্তারকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত রাজু স্থানীয় একটি স্ক্রিন প্রিন্টের কারখানায় কাজ করতো। গত সাত মাস আগে কর্মস্থলে অনিয়মিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত লিপি আক্তার দেওভোগ পাকা রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত লতিফের মেয়ে।

মামলার বাদি নিহত রাজুর রাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পুঁড়িয়ে মারা হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। তার মায়ের উপযুক্ত শাস্তি বাদি করছি। এছাড়াও নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসি এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ ন্যায়বিচার দাবি করেন।

মামলায় আনোয়ার উল্লেখ করেন, ১৮ বছর পূর্বে আক্তারের সাথে তার বিয়ে হয়। ১২/১৩ বছর পূর্বে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর মধ্যে তাদের সংসারে রাইয়ান (১৭) ও রাজু (১৪) নামে দুই ছেলের জন্ম হয়। বিচ্ছেদের পর মায়ের কাছেই থাকতো সন্তানেরা।

গত ১৩ নভেম্বর রাতে লিপি অজ্ঞাত দুই তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে রাজুর শয়ন কক্ষে তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে রাজুর ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়। পরে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজুর মৃত্যু হয়।

এদিকে রাজুর মৃত্যুর বিষয়ে এলাকাবাসি ও স্বজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, রাজুর মায়ের পরকীয়া সম্পর্ক দেখে ফেলায় তার মা তাকে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে মেরেছে। আবার কেউ বলছেন, রাজু দীর্ঘ সাত মাস যাবত কাজে না যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মা তাকে হত্যা করেছে। তবে রাজুর মায়ের পরিবারের দাবি, রাজু নিজের গায়ে নিজেই কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে।

নিহত রাজুর খালা মিনু বেগম বলেন, গত তিনদিন আগে আমার বাবা মারা গেছে। আমরা সবাই শোকে পাথর হয়ে গেছি। ঘটনার রাতে রাজু পকেটে ম্যাচ ও কেরোসিন তেল নিয়ে বারান্দায় যায়। এরপর তিনি পাশের রুম থেকে রাজুর চিৎকার শুনতে পান।

তিনি দাবি করেন, কারখানার চাকরি চলে যাওয়ায় মা বকাঝকা করায় রাজু আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে আত্মহত্যার চেষ্টার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান মোল্লা বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত লিপি বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি অধিকতর গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন