বাউফলে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে সশস্ত্র কিশোর গ্যাং
- আপডেট সময় : ০৮:০৯:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩
- / ৬৮
মোঃ রানা সেরনিয়াবাত, বরিশাল:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় প্রতিদিন প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে সশস্ত্র কিশোর গ্যাং। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। এরা নিজেদের মতো করে এক একটা গ্যাং গড়ে তুলছে।এই গ্যাংয়ের সদস্যদের উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে মুরুব্বিরা তাদের ভয়ে মুখ খুলছেন না। আবার কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও অপমান অপদস্ত সহ হামলার শিকার হচ্ছেন। সমাজে এ যেন একটা চরম আকারে ব্যধি হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে প্রশাসনের মাঝে অসহায়ত্ব।
সূত্র জানায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই কিশোর গ্যাং। এদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছর। এরা তথাকথিত বড়ভাইদের শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নিজেদের অধিপত্য বিস্তার করতে দেশি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে প্রায়শই। ইভটিজিং, মাদক কারবারি, সেবন ও চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে আছে তারা।
অভিযোগ রয়েছে, এ সব কিশোর গ্যাংয়ের মদতদাতা হিসেবে রয়েছে তথাকথিত বড় ভাইদের শেল্টার সহ উসকানি। এতে অসহায় বরণ করছে অভিভাবক।
নাম না বলা শর্তে একাধিকরা জানান, পৌরসভার ভীতরে রয়েছে সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের ৫/৭টি কিশোর গ্যাং, বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস বাজার ও হাইস্কুলের সামনে বা পিছনে, বিলবিলাস নজির মিয়া বাড়ি সংলগ্ন স্কুলের রাস্তায় গুলো, গোসিংগা পল্লীবিদ্যূৎ এলাকায়, অলিপুরা বাজার এলাকা, পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন, শৌলা বাজার এলাকা, মদনপুরা সোনামদ্দিন মৃধা স্কুলের মড়ায়, নাজিরপুরের উরিরহাট, ধান্দী বাজার, সুলতানাবাদ এবং দাসপাড়ার চৌমুহনী, কাঠের পুল ইত্যাদি ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকায় বেপরোয়া হয়ে চলছে কিশোর গ্যাং। এতে স্কুলে-মাদ্রাসায় আসতে যাইতে মেয়ে শিক্ষার্থীরা চরম আকারে ইভটিজিং সহ বাধায় পড়ে। এতে কেউ কথা বললে জোটবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়।
তবে উপজেলার সকল ইউনিয়নেই কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলারও ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। সম্প্রতি কিশোর গ্যাং সদস্যদের সংশোধন করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করেছিলেন কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহম্মেদ মনির হোসেন মোল্লা। কিন্তু তাতে কি হবে, তা যেন তারা তোয়াক্কাই করছে না। চেয়ারম্যানের অগোচরে মাথা তোলা কিছু নেতারা ওইসব কিশোর গ্যাং সক্রিয় রাখতে দিচ্ছেন শেল্টার প্রতিনিয়ত। আর কালাইয়া ইউনিয়ন যেন মাদকের আখড়া বাড়িতে পরিনত হয়েছে। চলছে দেদারসে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীদের উৎপাত, এতে যেন অসহায় বরন করছেন চেয়ারম্যান গন।
কারণ ওইসব মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে রয়েছে প্রশাসনের সক্ষতা। নিচ্ছেন প্রশাসন মাসিক মাসোয়ারা। আবার গোপনে আটক করেও মোটা অংকের টাকা খেয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন প্রায়শই।
সুশীল সমাজের সচেতনরা বলেন, কিশোরদের এই অবক্ষয়ের জন্য দায়ী তাদের মা-বাবা। তারা এত অল্প বয়সী সন্তানদের হাতে স্মাট ফোন তুলে দেওয়ার কারণে ইন্টারনেট নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। সেখানে ফেসবুকসহ নানা পর্নো ভিডিও দেখে সময় ব্যয় করার কারণে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। মা-বাবাদের উচিত সন্তানদের বিপথে পা বাড়ানোর আগেই যেভাবেই হোক তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি শুরুর দিকে শোধরানো যায় তা হলে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
তারা আরও বলেন, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক/শিক্ষিকারা অনেকেই আছেন অনিয়ম দুর্নীতিবাজ। তারা শ্রেণিতে পাঠদান না করে খুলে বসেছেন প্রাইভেট কোচিং। এতে আরও অদপতনের দিকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক/শিক্ষিকারাই যদি অনিয়ম দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে তাদের শিক্ষার্থীরা কি হতে পারে তা আপনারাই জানেন।
এদিকে কিশোর গ্যাং দমনে বৃহস্পতিবার (৬ই জুলাই-২০২৩) পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেছেন বাউফল থানা পুলিশ। কিন্তু রহস্যজনক কারনে একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেননি পুলিশ। সচেতন মহল মনে করেন এটা লোকদেখানো ছাড়া আর কিছুই না।
এব্যাপারে সুশীল সমাজের সচেতনরা জানান, দায়সারাভাবে দুই একটা অভিযান চালিয়ে হয়ে যান পুলিশ আবার লাপাত্তা। তবে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশ প্রশাসন যদি সঠিকভাবে অভিযান চালিয়ে ওইসবদের ঠিকমতো শাস্তি দিতে পারতেন তাহলে আস্তে আস্তে অবশ্যই ওইসবদের বিলুপ্তি ঘটবে। আবার দেখা যায় নেতাদের দালালি বা সুপারিশ, তদবির আমলে নিতে! এগুলো পুলিশ প্রশাসন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেশ ও সমাজের কথা চিন্তা করে সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক প্রতিবেদককে বলেন, ওই অভিযানে কাউকেই আটক করা যায়নি। তবে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত শুধু কিশোর গ্যাং নয় সকল অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২শে মার্চ-২০২৩ ইং বুধবার বিকাল সারে ৪টার দিকে সিনিয়র-জুনিয়রকে কেন্দ্র করে উপজেলা ইন্দ্রকুল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মো. নাফিজ মোস্তফা আসনারী (১৫) ও মো. মারুফ হোসেন (১৫) ও সিয়াম (১৫) কে ছুরিকাঘাত করে একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সিফাত, সৈকতসহ একদল কিশোর। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য নাফিজ ও মারুফকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে ওই দিনই সন্ধ্যা সারে সাতটার দিকে তাদের দুজনেরই মৃত্যু হয়।