১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহকর্মীকে নির্যাতন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০১:১৭:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
  • / ৪৭

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার:

সাভারের আশুলিয়ায় এক গৃহপরিচারিকাকে স্বর্ণের চেইন চুরির অভিযোগ এনে চাউল পড়া খাইয়ে চোর সাব্যস্ত করে বেধড়ক মারপিটে করে জখম করেছে স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের পরিবার। এ সময় ভুক্তভোগীর স্বামীকেও মারধর করা হয়। শনিবার রাতে আবারও বাসা থেকে ধরে নিয়ে ওই গৃহপরিচারিকার স্বামী বোরহান উদ্দিনকে (৫১) বেধরড় মারধর করা হয়।
এর আগে গত ২০জুন বিকেলে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ির গৃহপরিচারিকা নাজিরাকে বেদম পিটিয়েছেন রুবেল আহম্মেদ ভূইয়া তার স্ত্রী ইতিসহ অনান্যরা। পরে তারা ২/৩ দিন আত্মগোপনে থেকে পুলিশের কাছে যায়। কিন্তু পুলিশের নিকট যাওয়ায় তাদেরকে আবারও মারধর করা হয়।
রুবেল আহম্মেদ ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন ভুইয়ার ভগ্নিপতি।
মারধরের শিকার নাজিরা বেগম (৩৫) ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার মাইজবাদ পাঁচপাড়া এলাকার আব্দুর সাত্তারের মেয়ে। সে স্বামী সন্তান নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার আনোয়ার মেম্বারের বাসায় ভাড়া থেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।
ভুক্তভোগী নাজিরা বলেন, করোনার শুরু দিক থেকে আমি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম সৈয়দ আহমেদ ভুইয়ার বাড়িতে কাজ শুরু করি। ঘটনার দিন ম্যাডাম (ইতি) আমাকে বাসায় ডেকে বলেন বাথরুমে একটি স্বর্ণের চেইন ছিল সেটি কোথায়। আমি বলি জানি না। পরে ম্যাডাম আমাকে বলে তুই চেইন চুরি করেছিস। বার বার অস্বীকার করলে। ম্যাডাম লোকজন দিয়ে আমার বাসায় গিয়ে চেইন তালাশ করে এবং আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। পরে তারা চেইন না পেয়ে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন বিকেল ৫টার দিকে আমাকে তারা আবার তাদের বাসায় ডাকে বাসায় গিয়ে দেখি তারা চাউল পড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরে তারা সবাই চাউল পড়া খেতে বলে। আমি চাউল পড়া খাই। আমার দাঁতে সমস্যা থাকায় চাউল গুড়া করতে পারি নাই, চাউল গুড়া না হওয়ায় তারা বলে আমি চেইন চুরি করেছি। পরে ম্যাডাম আমাকে অনেক মারধর করে। পরে আমার স্বামীকে ডেকে এনে তাকেও চাইল পড়া খাইতে বলে। সেও চাউল পড়া খায় কিন্তু চাউল গুড়া না হওয়ায় তাকে পিছনে হাত বেঁধে, চোখ ও মুখ বেঁধে অনেক মারপিট করে।
ভুক্তভোগীর স্বামী বোরহান উদ্দিন বলেন, আমাকে ডেকে এনে হাত, চোখ ও মুখ বেধে মারপিট করে ছাদে নিয়ে যায়। পরে সেখানে বেশি মারধর করে। পরে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে ছেড়ে দেন। পরে আমরা ভয়ে ২/৩ দিন পালিয়ে থাকি। পরে থানা পুলিশের নিকট গেলে ডিউটি অফিসার এক ম্যাডাম আমাদেরকে এসআই নুর খান স্যারকে ফোন দিতে বলেন। স্যারের সাথে আমরা দেখা করলে তিনি বলেন আর কিছু হবে না। আপনি থাকেন, কিছু হলে আমি আছি।
তিনি আরও বলেন, নুর খান স্যারের কথায় আমি বাসায় যাই এবং স্বাভাবিকভাবে বসবাস করি। কিন্তু শনিবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে আমাকে ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুর খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন ভুইয়ার সাথে কথা বলেছিলাম। আর কোন সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। তবে যেহেতু আবারও ডেকে নিয়ে মারধর করেছে তাদের উচিত ছিল জানানো। এখন তারা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বোরহান উদ্দিনের শ্যালক জজ মিয়া রোববার দুপুরে মুঠফোনে বলেন, মারধরের কারনে বোরহান উদ্দিনের অবস্থা খুব খারাপ। সাভারে কোন চিকিৎসা করতে পারলাম না, তাদের ভয়ে। রুবেল ও তার লোকজন বাড়ি থেকে মালামালসব বের করে দিয়েছে সাভার ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। তাদের আমরা ভয়ে সাভার ছেড়ে ময়মনসিংহ চলে যাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে রুবেল আহম্মেদ ভূইয়া মুঠফোনে একাধিবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন জবাব দেননি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহকর্মীকে নির্যাতন

আপডেট সময় : ০১:১৭:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার:

সাভারের আশুলিয়ায় এক গৃহপরিচারিকাকে স্বর্ণের চেইন চুরির অভিযোগ এনে চাউল পড়া খাইয়ে চোর সাব্যস্ত করে বেধড়ক মারপিটে করে জখম করেছে স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের পরিবার। এ সময় ভুক্তভোগীর স্বামীকেও মারধর করা হয়। শনিবার রাতে আবারও বাসা থেকে ধরে নিয়ে ওই গৃহপরিচারিকার স্বামী বোরহান উদ্দিনকে (৫১) বেধরড় মারধর করা হয়।
এর আগে গত ২০জুন বিকেলে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ির গৃহপরিচারিকা নাজিরাকে বেদম পিটিয়েছেন রুবেল আহম্মেদ ভূইয়া তার স্ত্রী ইতিসহ অনান্যরা। পরে তারা ২/৩ দিন আত্মগোপনে থেকে পুলিশের কাছে যায়। কিন্তু পুলিশের নিকট যাওয়ায় তাদেরকে আবারও মারধর করা হয়।
রুবেল আহম্মেদ ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন ভুইয়ার ভগ্নিপতি।
মারধরের শিকার নাজিরা বেগম (৩৫) ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার মাইজবাদ পাঁচপাড়া এলাকার আব্দুর সাত্তারের মেয়ে। সে স্বামী সন্তান নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার আনোয়ার মেম্বারের বাসায় ভাড়া থেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।
ভুক্তভোগী নাজিরা বলেন, করোনার শুরু দিক থেকে আমি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম সৈয়দ আহমেদ ভুইয়ার বাড়িতে কাজ শুরু করি। ঘটনার দিন ম্যাডাম (ইতি) আমাকে বাসায় ডেকে বলেন বাথরুমে একটি স্বর্ণের চেইন ছিল সেটি কোথায়। আমি বলি জানি না। পরে ম্যাডাম আমাকে বলে তুই চেইন চুরি করেছিস। বার বার অস্বীকার করলে। ম্যাডাম লোকজন দিয়ে আমার বাসায় গিয়ে চেইন তালাশ করে এবং আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। পরে তারা চেইন না পেয়ে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন বিকেল ৫টার দিকে আমাকে তারা আবার তাদের বাসায় ডাকে বাসায় গিয়ে দেখি তারা চাউল পড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরে তারা সবাই চাউল পড়া খেতে বলে। আমি চাউল পড়া খাই। আমার দাঁতে সমস্যা থাকায় চাউল গুড়া করতে পারি নাই, চাউল গুড়া না হওয়ায় তারা বলে আমি চেইন চুরি করেছি। পরে ম্যাডাম আমাকে অনেক মারধর করে। পরে আমার স্বামীকে ডেকে এনে তাকেও চাইল পড়া খাইতে বলে। সেও চাউল পড়া খায় কিন্তু চাউল গুড়া না হওয়ায় তাকে পিছনে হাত বেঁধে, চোখ ও মুখ বেঁধে অনেক মারপিট করে।
ভুক্তভোগীর স্বামী বোরহান উদ্দিন বলেন, আমাকে ডেকে এনে হাত, চোখ ও মুখ বেধে মারপিট করে ছাদে নিয়ে যায়। পরে সেখানে বেশি মারধর করে। পরে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে ছেড়ে দেন। পরে আমরা ভয়ে ২/৩ দিন পালিয়ে থাকি। পরে থানা পুলিশের নিকট গেলে ডিউটি অফিসার এক ম্যাডাম আমাদেরকে এসআই নুর খান স্যারকে ফোন দিতে বলেন। স্যারের সাথে আমরা দেখা করলে তিনি বলেন আর কিছু হবে না। আপনি থাকেন, কিছু হলে আমি আছি।
তিনি আরও বলেন, নুর খান স্যারের কথায় আমি বাসায় যাই এবং স্বাভাবিকভাবে বসবাস করি। কিন্তু শনিবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে আমাকে ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুর খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন ভুইয়ার সাথে কথা বলেছিলাম। আর কোন সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। তবে যেহেতু আবারও ডেকে নিয়ে মারধর করেছে তাদের উচিত ছিল জানানো। এখন তারা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বোরহান উদ্দিনের শ্যালক জজ মিয়া রোববার দুপুরে মুঠফোনে বলেন, মারধরের কারনে বোরহান উদ্দিনের অবস্থা খুব খারাপ। সাভারে কোন চিকিৎসা করতে পারলাম না, তাদের ভয়ে। রুবেল ও তার লোকজন বাড়ি থেকে মালামালসব বের করে দিয়েছে সাভার ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। তাদের আমরা ভয়ে সাভার ছেড়ে ময়মনসিংহ চলে যাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে রুবেল আহম্মেদ ভূইয়া মুঠফোনে একাধিবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন জবাব দেননি।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন