প্রতিবন্ধি পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তরুন ব্যবসায়ী
- আপডেট সময় : ০৬:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩
- / ৫৯
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাত প্রতিবন্ধি পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তরুণ ব্যবসায়ী মমতাজ আলী শান্ত। শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে সাত প্রতিবন্ধির জন্য ঈদের কোরবানির পশুসহ উপহার নিয়ে পরিবারটি পাশে দাঁড়ান এ তরুন ব্যবসায়ী।
প্রতিবন্ধি সাতজন হচ্ছেন, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী সাংকাচওড়া গ্রামে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি এন্তাজুল হক (৪৮), তার ছেলে নুরন নবী (২৬), নুর আলম (২৪), লিমন ইসলাম (২২), মেয়ে রেশমার (১৩), দুই ছেলের স্ত্রীরাও শ্রবন ও মানসিক প্রতিবন্ধি এবং বড় ছেলের শ্বাশুরীও দৃষ্টি প্রতিবন্ধি। সবাই একই পরিবারে বসবাস করেন। পরিবারটি চলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি নুরন নবীর দোতারার গানের সামান্য আয়ে।
“দোতরাই চলে নুরুনবীর সংসার”এই শিরোনামে গত ২৯ মার্চ একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে পরিবারটির পাশে দাড়ান কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা এলাকার তরুন ব্যবসায়ী মমতাজ আলী শান্ত। শুক্রবার বিকেলে আসন্ন ঈদ উল আযাহার কোরবানীর পশু একটি ছাগল এবং পরিবারটি সকল সদস্যের জন্য নতুন পোশাক নিয়ে সাত প্রতিবন্ধির বাড়িতে হাজির হন তিনি।
সাত প্রতিবন্ধির এ সংসারের আয়ের একমাত্র পথ নুরন নবীর গাণের দোরাতারাটিও নষ্ট। সেটির পরিবর্তে নতুন দোতারাসহ গান পরিবেশনের যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র প্রদানের আশ্বাস দেন তরুন ব্যবসায়ী। একই সাথে পরিবারটির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন তিনি।
এ সময় তার সাথে ছিলেন, লালমনিরহাট জেলা পরিষদ সদস্য (কালীগঞ্জ) মোজাম্মেল হক, দুর্গাপুর ইউপি সদস্য নবিকুল ইসলাম, সংরক্ষিত সদস্যা লাভলী বেগম, দুর্গাপুর ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্টার মাহমুদুল হাসান জুয়েল প্রমুখ।
স্থানীয়রা জানান, জন্মলগ্ন থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এন্তাজুল হক। তার স্ত্রীর নাম নুরজাহান বেগম। তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ, যে কারণের আগে তার সহায়তাতেই পরিচালিত হতো এন্তাজুলের সংসার। একপর্যায়ে সংসারে তাদের প্রথম সন্তান নুরন নবীর জন্ম হয়। কিন্তু সন্তানটি বাবার মতোই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়। এর দুই বছর পর দ্বিতীয় সন্তান নুর আলম (২৪) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়। একইভাবে তৃতীয় সন্তান লিমন ইসলাম (২২) ও চতুর্থ সন্তান রেশমার (১৩) জন্ম নেয়। তারাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
এভাবেই পরিবারটিতে নতুন চারজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্ম হয়। বাবা-মাসহ পরিবারটির ছয়জন সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই দৃষ্টি শক্তিহীন। নুরজাহানই সংসারটির একমাত্র সুস্থ ও উপার্জনক্ষম ছিলেন। সর্বশেষ গত ৯ বছর আগে নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতির সংসারে সুস্থ সবল শিশু সেমন ইসলামের জন্ম হয়। তাদের সাতজনের পরিবারে পাঁচজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এরই মধ্যে বড় দুই ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে বিয়ে করতে কোনো সুস্থ মেয়ে রাজি না হওয়ায় একজনকে মানসিক ও একজনকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এনিয়ে তাদের পরিবারে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতজনে। বড় দুই ছেলের ঘরে নাতি-নাতনি পেয়েছেন নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতি। তবে নাতি-নাতনিরা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছে।
বর্তমানে এই সাতজন প্রতিবন্ধীর সংসার চলে দোতরা বাজিয়ে গান করা বড় ছেলে নুরন নবীর আয় দিয়ে। বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জে গান গেয়ে ও শারীরিক কসরত দেখিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সাতজন প্রতিবন্ধীর এই বড় সংসার। গানে আয় হলে পেটে ভাত জোটে, না হলে উপোষ থাকতে হয় তাদের। জীবনের অনেক রাত তাদের অভুক্ত কেটেছে। নুরজাহান অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দৃষ্টিহীন স্বামী ও চার সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিয়েছেন। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় তাদের সাতজন প্রতিবন্ধীর পাঁচজনই ভাতা পাচ্ছেন। প্রতি মাসে জনপ্রতি ৭০০ হারে পাওয়া টাকা এবং নুরন নবীর দোরাতার গানের আয়ে চলছে তাদের ১০ সদস্যের সংসার।
সাত প্রতিবন্ধীর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরন নবী বলেন, ঈদে কোরবানী দিতে পারব কখনও ভাবি নি। ঈদের দিনে অন্যের বাড়ির মাংস ছাড়া মাংস মুখে উঠে না। এবারই প্রথম আমাদের বাড়িতে ছাগল কোরবানী হবে। সবাই একই রঙেয় পোশাক পড়ে ঈদের মাঠে যাব। ভাবতেই অবাক লাগে। শান্ত ভাইকে আল্লাহ নেক দীর্ঘায়ু দান করুন।
মানবিক সংবাদ প্রকাশ করায় ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যবসায়ী মমতাজ আলী শান্ত বলেন, মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য। সাম্প্রতিক সময় সাত প্রতিবন্ধির পরিবারের করুন চিত্র মানবিক কারনে তাদের পাশে এসেছি। ছোট বেলা থেকে এমন মানবিক ও সামাজিক কাজ করছি। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে শান্তি অন্য কোথাও নেই। পরিবারটির যা প্রয়োজন আগামীতে তা পুরন করার চেষ্টা করব।