মোহাম্মদ আলী, রামগঞ্জ:
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সরব রামগঞ্জের কামার পাড়া। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের কর্মষজ্ঞ। সন্ধ্যা থেকে রাত যতই গভীর হয় নীরব পরিবেশে কানে ভেসে আসে টুংটাং শব্দ। নিঃশব্দ পরিবেশটাকে টুংটাং শব্দে ছাপিয়ে চলছে কামারের হাতুড়ি আর হাঁপড়ের আওয়াজ। এর মধ্যে দিয়েই তারা জানান দিচ্ছেন ঈদ এসে গেছে। সময় বেশি নেই।
দেখা গেছে, নতুন তৈরি এবং পুরাতন দা, বটি, ছুরি, শান দিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন রামগঞ্জের কামররা। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। তারা তৈরি করছেন ধারালো ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটিসহ নানাবিধ সরঞ্জাম।
সরেজমিনে রামগঞ্জ, সোনাপুর, পানিয়ালা, দল্টা, ভাটরা কামারহাট ঘুরে দেখা যায়, ঈদে হাজার হাজার গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ, ইত্যাদি পশু কোরবানি করা হয়ে থাকে। এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্নার চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্যন্ত দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতি,ধামা ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়।
বাজারে সারা বছর শুধু দা, বঁটি বিক্রি হলেও ঈদকে সামনে রেখে দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গরু জবাইয়ের ছোরা, দেশি-বিদেশি চাপাতি, বিভিন্ন সাইজের ছুরি,দা, বটি ইত্যাদি।
অন্যদিকে কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে রূপ দিচ্ছেন কামাররা। তবে ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়লেও এখনো বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক দোকানিরা। রোজার ঈদের পর থেকেই মূলত তারা কোরবানির জন্য বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি শুরু করেন।
রামগঞ্জের স্বপন কুমার বলেন, এখনো মানুষের ছোরা-চাপাতি কেনা শুরু করেনি। মূলত গরু বিক্রির ওপরই আমাদের বেচা-বিক্রি নির্ভর করে। গরু কেনা যখন খুব জমে, তখন ছোরা-চাপাতিতেও মানুষ ভিড় করে। অনেকেই আবার পুরাতন ছোরা ধার দিতে আসেন। আর জবাই করার ছোরা সাধারণত মাদরাসার হুজুররাই কেনেন।
তিনি বলেন, ‘আগের বছর জবাই দেওয়ার পর গত এক বছরে আর কাজে লাগেনি। তাই তারা শান দিতে নিয়ে আসেন। এবার সবকিছুরই দাম একটু বাড়তি। গরু জবাইয়ের ছোরা বিক্রি হয় পিস হিসেবে। প্রতি পিস ছোরা বিক্রি হয় ৭০০ হতে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। গাড়ির স্প্রিংয়ের লোহার তৈরি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২শ টাকায়। এছাড়া বঁটি ৫০০ টাকা হতে ১০০০ টাকা পর্যন্ত এছাড়াও চায়নিজ চাপাতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়।
রামগঞ্জসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের বেশ কয়েকটি কামারের দোকানে কথা বলে জানা গেছে, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার অপ্রতুলতায় দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। ফলে কয়লার সংকটের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না তারা।
বিভিন্ন হোটেল থেকে প্রতি বস্তা কয়লা ৫শ’ টাকায় ক্রয় করে আনতে হয় তাদের। যেখানে আগে প্রতিদিন ১শ’টির মতো কাস্তে তৈরি করা হলেও বর্তমানে সেটি ১০ এ এসে দাঁড়িয়েছে। কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। ফলে কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছে। অভিজ্ঞজনদের মতে, সরকারিভাবে এ শিল্পে যদি পৃষ্ঠপোষকতা করা না হয় তাহলে অচিরেই এ শিল্প হারিয়ে যেতে পারে।
এসকে মাল্টিমিডিয়া থেকে প্রকাশিত "প্রতিদিনের নিউজ ডটকম" হেড অফিস: ৫৩/এ নয়া পল্টন এক্সটেনশন রোড ঢাকা-১২০০। মোবাইল ০১৯৩০ ১৭২ ৫২০, ০১৩১৪ ১৬৮ ৬৪৪ । আঞ্চলিক অফিস: হাজী রজ্জব আলী সুপার মার্কেট (নিচ তলা) চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। Email:protidinernews24@gmail
সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না