সুজন মাহমুদ, ঝিকরগাছা:
সরকারি নীতিমালাকে উপেক্ষা করে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হলেন মোঃ আনারুল ইসলাম।
সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা এই নিয়োগ কর্যক্রম সম্পূর্ণ হয়েছে বলে এলাকাবাসীর মধ্যে গুনজন শোনা গেলেও তার (মোঃ আনারুল ইসলাম) বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য গোপন করে নিয়োগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ১৩ মে ২০২৩ তারিখে যশোর জেলা স্কুলে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বোর্ডে ৪ জন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করেন। তার মধ্যে মোঃ আনারুল ইসলামকে নিয়োগ বোর্ড প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি উক্ত স্কুলে যোগদান করেছেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তিন বছরের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরীর অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামুলক। কিন্তু যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে অভিজ্ঞতা না থাকলেও শুধুমাত্র ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আনারুল ইসলাম। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে চাকুরী নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আনারুল ইসলাম নির্বাসখোলা ইউনিয়নের নবারুণ বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে পূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন না করেই তথ্য জালিয়াতি করে যশোরের পাঁচ বাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে আবারও তিনি নবারুণ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে আবারও ২০২০ সালের ২১ এপ্রিল চৌগাছা উপজেলার উজিরপুর এমপিজেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। জুনিয়র স্কুল হওয়ার কারণে সেখানে তিনি ৮ম গ্রেডে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছিলেন। এখান থেকে গত ১৬ মে ২০২৩ তারিখে প্রায় ২১মাসের মাথায় তিনি আবারও প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। শর্তানুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে ৩ বছর বা ৩৬ মাসের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামুলক। কিন্তু তিনি এই অভিজ্ঞতা না থাকলেও তার আবেদন পত্র গৃহীত হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য বড় অঙ্কের অর্থিক লেনদেন হয়েছে এবং সরকারী প্রশাসনের কর্মকর্তারাও জড়িত বলে স্থানীয় সচেতন মহল ধারণা করছে। নিয়ম অনুযায়ী এক প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় অন্য প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হলে চাকরিরত প্রতিষ্ঠান থেকে এনওসি বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু তিনি সেটা না নিয়েই সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে এখন সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। ইতিমধ্যে সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা এই নিয়োগ কর্যক্রম সম্পূর্ণ হয়েছে বলে এলাকাবাসীর মধ্যে গুনজন শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে হলে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু আনারুল ইসলাম এখনও পর্যন্ত কোনো পদত্যাগপত্র পেশ করেননি বলে জানা গেছে।
চৌগাছা উপজেলার উজিরপুর এমপিজেবি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে সেখানে প্রধান শিক্ষক মোঃ আনারুল ইসলাম অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। হাজিরা খাতাতে ১৫ মে'র পর তার আর স্বাক্ষর নেই। তাৎক্ষনিক প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি উজিরপুর স্কুল থেকে ছুটিতে আছি। ছুটির দরখাস্ত আছে কিনা এর উত্তরে তিনি বলেন সভাপতির নিকট থেকে মৌখিক ভাবে ছুটি নিয়েছি। প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন যে বর্তমানে সে ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসার ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন। উজিরপুর এমপিজেবি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে থেকে এনওসি নিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কিনা এর উত্তরে তিনি বলেন, সভাপতি আমাকে মৌখিক ভাবে সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আবেদন করার এবং যোগদান করার সম্মতি জানিয়েছেন। তার সাথে সরাসরি কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে। তখন তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ কাগজ প্রদর্শন করানো হলে, তিনি বলেন আগে দুরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। অনেক পরিশ্রম হতো। এখন কাছে হয়েছে। অনিয়মের বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, যদি সরকারি বেতন ভাতা না হয় তবে এখানে বিনা বেতনে চাকরি করবো।
চৌগাছার উজিরপুর এমপিজেবি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সভাপতি গুলনাহার বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক সাহেব নতুন স্কুলে যোগদান করেছেন এরকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তিনি আমার কাছ থেকে এন ও সি বা অন্য কোনো কাগজ নেননি বা পদত্যাগপত্র জমা দেননি। প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চার অসুস্থতার জন্য তিনি ফোনে দুদিন ছুটি চেয়েছিলেন।
ঝিকরগাছার সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি আজহারুল ইসলাম লাবু বলেন, সে (প্রধান শিক্ষক) বলছে কোন তথ্য গোপন করেনি।
ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিঞা বলেন, আমার জানা মতে তার কাগজপত্র সঠিক আছে। তবে এই বিষয় নিয়ে আমি তার সাথে একটু যোগাযোগ করে দেখি সে কি বলে।
এসকে মাল্টিমিডিয়া থেকে প্রকাশিত "প্রতিদিনের নিউজ ডটকম" হেড অফিস: ৫৩/এ নয়া পল্টন এক্সটেনশন রোড ঢাকা-১২০০। মোবাইল ০১৯৩০ ১৭২ ৫২০, ০১৩১৪ ১৬৮ ৬৪৪ । আঞ্চলিক অফিস: হাজী রজ্জব আলী সুপার মার্কেট (নিচ তলা) চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। Email:protidinernews24@gmail
সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না