১০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

মিনিকেট ধান নিয়ে প্রতারণা, চিকন চাল মিনিকেট বলে বিক্রি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৬:০৯:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
  • / ৯২

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

কুষ্টিয়া সংবাদদাতাঃ

 

দেশের উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেনির পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মিনিকেট চাল। কিন্তু বাজারে মিনিকেট বলে যে চাল বিক্রি হয় সে জাতের কোনো ধানই নেই বলে দাবি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের। ফলে মিনিকেট ধানের অস্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কয়েকদিন ধরে কুষ্টিয়ায় অনুসন্ধান চালানো হয় । কথা হয় একাধিক কৃষক, ধান-চাল ব্যবসায়ী, মিল মালিক, চালকল মালিক সমিতির নেতাসহ কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
অনুসন্ধানে কুষ্টিয়ায় মিনিকেট ধানের চাষাবাদ হয় বলে যে তথ্য মিলেছে তা মুষ্টি কয়েক কৃষকের কথায়। আমন এবং বোরো দুই মৌসুমেই জেলার কৃষকরা এ ধান চাষ করেন। আমন মৌসুমে ফলন কম হওয়ায় কেবল বীজ তৈরির জন্যই কৃষকরা মিনিকেট ধানের চাষ করেন। তবে ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক মাঠজুড়ে মিনিকেট ধানের চাষ করছেন। অন্য ধানের চেয়ে ভালো ফলন এবং দাম বেশি হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে মিনিকেট ধান। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, দেশের অধিকাংশ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে মিনিকেট ধানের চাষ হয়ে আসছে। তবে দক্ষিণবঙ্গের ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরায় ব্যাপকহারে মিনিকেট চাষ হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া মিনিকেট ধান চাষাবাদ হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. হায়াৎ মাহাবুব বলেন, কুষ্টিয়ায় মিনিকেট ধান কোন চাষী আবাদ করেন না। চাষীরা ২৬, ২৮, ৫১, ৭৫ সহ বিভিন্ন চিকন ধানের ব্যপক আবাদ করছে। এই চিকন ধানের চালকে বাজারে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করছে চাল ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, এই চিকন চাল বিক্রি করার সময় বস্তার গায়ে চিকন চাল, মাঝারি চিকন চাল বলে লিখে বাজার জাত করলে আর কোন সমস্যা হয়না। এই সব চিকন চালকে মিনিকেট বলে ব্যাপক প্রচার দেয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মুখে মুখে মিনিকেট চাল প্রচার হয়েছে। মিনিকেট ধানের কোন অস্তিত্ব্ খুজে পাওয়া যায় না। গুটি কয়েক কৃষক তাদের মনগড়া মিনিকেট ধান নাম দিয়ে চাষ করছে।

দীর্ঘদিন ধরে মিনিকেট ধান চাষাবাদ করেন এমন কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হয় । তাদেরই একজন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা এলাকার কৃষক তোঁতা জোয়ার্দার। নিজের চাষ করা মিনিকেট ধানক্ষেতে বসেই কথা বলেন এ ধানের জাত নিয়ে।
তোঁতা জোয়ার্দার জানান, ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যায় দেশে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় ভারত সরকার সে দেশের কৃষকদের চাষ করার জন্য ছোট ছোট প্যাকেটে ধান বীজ ও সার দিয়েছিল। সেই ধান বীজের কিছু প্যাকেট চোরাইপথে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে কয়েকজন কৃষকের হাতে পৌঁছায়। ওই প্যাকেটের গায়ে ‘মিনিকেট’ লেখা ছিল। কৃষকরা ওই বীজ লাগিয়ে ব্যাপক ফলন পান। তবে কৃষি অফিস বলছেন মিনিকেট না মিনিকিট লেখা ছিল। মানে ছোট বক্সের ভিতর কিছু ধানের বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে চাষিদেরকে উদ্ববুদ্ধ করেছিল। সেই মিনিকিট থেকে মিনিকেট ধান প্রচার করা হচ্ছে। পরবর্তী বছর কৃষকরা সেই ধান থেকে নিজেরাই বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করেন। ধানটি অতি সরু এবং ফলন বেশি হওয়ায় দিন দিন কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতীয় সেই ধান দেশে চাষাবাদ শুরু হওয়ার পর কৃষকরা নাম দেন মিনিকিটের পরিবর্তে ‘মিনিকেট’। সেই থেকে এই ধানটি বিভিন্ন জেলায় কম-বেশি চাষাবাদ হয়ে আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কুষ্টিয়ায় এবার ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমিতে খরিপ-২ আমন ধান আবাদ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার বাড়াদী গ্রামের ধান চাষি নওশের আলী জানান, এ অঞ্চলের কারা মিনিকেট ধান আবাদ করেন তা আমরা জানিনা। বি-আর ৮৬, ২৮, ২৬, ৫১, ৫৭, ৭৫, ৮১ সহ ব্রি ধান ৬৩, ৮১ ও ব্রি ১০০ ধান চিকন যা দেখতে মিনিকেট ধানের মত। কিন্তু মিনিকেট ধান না। দেশে মিনিকেট চালের অন্যতম প্রবক্তা বাংলাদেশ অটোমেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রশিদ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আব্দুর রশীদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ধান উৎপাদনের সঙ্গে স¤পৃক্ত নন। কৃষকের ধান কিনে চাল করে বাজারে বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের কাজ। কৃষক বাজারে ধান নিয়ে এসে যে নাম বলে সে নামেই ব্যবসায়ীরা চাল বিক্রি করে।
তিনি আরও বলেন, মিনিকেট ধান নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো মানে হয় না। সরকারকে হয় মিনিকেট ধানের জাতকে স্বীকৃতি দিতে হবে নতুবা মিনিকেট ধান চাষ করা যাবে না মর্মে ঘোষণা দিতে হবে। তাহলেই তো সবকিছু মিটে যায়। আমার কথা হচ্ছে, সেই আশির দশক থেকে আমাদের কৃষকরা কম-বেশি এ ধানের চাষ করছেন তাহলে এটার স্বীকৃতি দিতে বাধা কোথায়?

বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, মোটা ধান কেটে বা ছেঁটে পালিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করার যে অভিযোগ সেটি একদমই মিথ্যা। কেননা মিনিকেট নামে তো দেশে ধানই রয়েছে। কৃষকরাই এ ধান চাষাবাদ করছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

সাবধান
এই পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু কপি করতে পারবেন না

মিনিকেট ধান নিয়ে প্রতারণা, চিকন চাল মিনিকেট বলে বিক্রি

আপডেট সময় : ০৬:০৯:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

কুষ্টিয়া সংবাদদাতাঃ

 

দেশের উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেনির পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মিনিকেট চাল। কিন্তু বাজারে মিনিকেট বলে যে চাল বিক্রি হয় সে জাতের কোনো ধানই নেই বলে দাবি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের। ফলে মিনিকেট ধানের অস্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কয়েকদিন ধরে কুষ্টিয়ায় অনুসন্ধান চালানো হয় । কথা হয় একাধিক কৃষক, ধান-চাল ব্যবসায়ী, মিল মালিক, চালকল মালিক সমিতির নেতাসহ কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
অনুসন্ধানে কুষ্টিয়ায় মিনিকেট ধানের চাষাবাদ হয় বলে যে তথ্য মিলেছে তা মুষ্টি কয়েক কৃষকের কথায়। আমন এবং বোরো দুই মৌসুমেই জেলার কৃষকরা এ ধান চাষ করেন। আমন মৌসুমে ফলন কম হওয়ায় কেবল বীজ তৈরির জন্যই কৃষকরা মিনিকেট ধানের চাষ করেন। তবে ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক মাঠজুড়ে মিনিকেট ধানের চাষ করছেন। অন্য ধানের চেয়ে ভালো ফলন এবং দাম বেশি হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে মিনিকেট ধান। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, দেশের অধিকাংশ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে মিনিকেট ধানের চাষ হয়ে আসছে। তবে দক্ষিণবঙ্গের ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরায় ব্যাপকহারে মিনিকেট চাষ হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া মিনিকেট ধান চাষাবাদ হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. হায়াৎ মাহাবুব বলেন, কুষ্টিয়ায় মিনিকেট ধান কোন চাষী আবাদ করেন না। চাষীরা ২৬, ২৮, ৫১, ৭৫ সহ বিভিন্ন চিকন ধানের ব্যপক আবাদ করছে। এই চিকন ধানের চালকে বাজারে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করছে চাল ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, এই চিকন চাল বিক্রি করার সময় বস্তার গায়ে চিকন চাল, মাঝারি চিকন চাল বলে লিখে বাজার জাত করলে আর কোন সমস্যা হয়না। এই সব চিকন চালকে মিনিকেট বলে ব্যাপক প্রচার দেয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মুখে মুখে মিনিকেট চাল প্রচার হয়েছে। মিনিকেট ধানের কোন অস্তিত্ব্ খুজে পাওয়া যায় না। গুটি কয়েক কৃষক তাদের মনগড়া মিনিকেট ধান নাম দিয়ে চাষ করছে।

দীর্ঘদিন ধরে মিনিকেট ধান চাষাবাদ করেন এমন কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হয় । তাদেরই একজন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা এলাকার কৃষক তোঁতা জোয়ার্দার। নিজের চাষ করা মিনিকেট ধানক্ষেতে বসেই কথা বলেন এ ধানের জাত নিয়ে।
তোঁতা জোয়ার্দার জানান, ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যায় দেশে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় ভারত সরকার সে দেশের কৃষকদের চাষ করার জন্য ছোট ছোট প্যাকেটে ধান বীজ ও সার দিয়েছিল। সেই ধান বীজের কিছু প্যাকেট চোরাইপথে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে কয়েকজন কৃষকের হাতে পৌঁছায়। ওই প্যাকেটের গায়ে ‘মিনিকেট’ লেখা ছিল। কৃষকরা ওই বীজ লাগিয়ে ব্যাপক ফলন পান। তবে কৃষি অফিস বলছেন মিনিকেট না মিনিকিট লেখা ছিল। মানে ছোট বক্সের ভিতর কিছু ধানের বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে চাষিদেরকে উদ্ববুদ্ধ করেছিল। সেই মিনিকিট থেকে মিনিকেট ধান প্রচার করা হচ্ছে। পরবর্তী বছর কৃষকরা সেই ধান থেকে নিজেরাই বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করেন। ধানটি অতি সরু এবং ফলন বেশি হওয়ায় দিন দিন কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতীয় সেই ধান দেশে চাষাবাদ শুরু হওয়ার পর কৃষকরা নাম দেন মিনিকিটের পরিবর্তে ‘মিনিকেট’। সেই থেকে এই ধানটি বিভিন্ন জেলায় কম-বেশি চাষাবাদ হয়ে আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কুষ্টিয়ায় এবার ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমিতে খরিপ-২ আমন ধান আবাদ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার বাড়াদী গ্রামের ধান চাষি নওশের আলী জানান, এ অঞ্চলের কারা মিনিকেট ধান আবাদ করেন তা আমরা জানিনা। বি-আর ৮৬, ২৮, ২৬, ৫১, ৫৭, ৭৫, ৮১ সহ ব্রি ধান ৬৩, ৮১ ও ব্রি ১০০ ধান চিকন যা দেখতে মিনিকেট ধানের মত। কিন্তু মিনিকেট ধান না। দেশে মিনিকেট চালের অন্যতম প্রবক্তা বাংলাদেশ অটোমেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রশিদ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আব্দুর রশীদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ধান উৎপাদনের সঙ্গে স¤পৃক্ত নন। কৃষকের ধান কিনে চাল করে বাজারে বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের কাজ। কৃষক বাজারে ধান নিয়ে এসে যে নাম বলে সে নামেই ব্যবসায়ীরা চাল বিক্রি করে।
তিনি আরও বলেন, মিনিকেট ধান নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো মানে হয় না। সরকারকে হয় মিনিকেট ধানের জাতকে স্বীকৃতি দিতে হবে নতুবা মিনিকেট ধান চাষ করা যাবে না মর্মে ঘোষণা দিতে হবে। তাহলেই তো সবকিছু মিটে যায়। আমার কথা হচ্ছে, সেই আশির দশক থেকে আমাদের কৃষকরা কম-বেশি এ ধানের চাষ করছেন তাহলে এটার স্বীকৃতি দিতে বাধা কোথায়?

বাংলাদেশ অটোরাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, মোটা ধান কেটে বা ছেঁটে পালিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করার যে অভিযোগ সেটি একদমই মিথ্যা। কেননা মিনিকেট নামে তো দেশে ধানই রয়েছে। কৃষকরাই এ ধান চাষাবাদ করছে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন