ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে, সুন্দরবন থেকে উপকুলে ফিরছে শত শত নৌকা
- আপডেট সময় : ০৫:৩৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
- / ৬১
খুলনা, সংবাদদাতা:
সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্ক থাকলেও এখনো তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে মোখার কবল থেকে রক্ষার জন্য সুন্দরবনে অবস্থান রত মাছ ধরা জেলেরা নিরাপদ স্থানে ফিরতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর , দক্ষিণ বেদকাশী, কয়রা সদর সহ বিভিন্ন এলাকার মাছ ধরা জেলেরা ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে সুন্দরবন থেকে শত,শত জেলে নৌকা উপকুলের নিরাপদ স্থানে ফিরে এসেছে।
কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের নিকটবর্তী সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বলেন, বনের পাশে বঙ্গোপসাগর ভয়ঙ্করভাবে উত্তাল হয়ে ওঠায় নিরাপদ আশ্রয়ে উপকূলে ফিরে এসেছেন তাঁরা। ইতোমধ্যে কয়রা উপজেলার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন সংলগ্ন সুতিয়া বাজার লঞ্চঘাটের পাশে অর্ধ শতাধিক মাছ ধরার নৌকা কুলে ভিড়ে আছে। নৌকায় থাকা জেলেরা বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালের পানি বেড়ে গেছে,যার কারণে নিরাপদ স্থানে এসেছেন। তারা আরও বলেন, বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে ছিলেন, তবে জঙ্গলের নদীতে এখন অনেক ঢেউ। এ জন্য আগাম আবহাওয়ার খবর পেয়ে উপকূলে ফিরে এসেছেন। অনেক নৌকা সুন্দরবনে আছে,সেগুলোও উপকূলে আসতে শুরু করেছে। গহীন জঙ্গলে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা পৌঁছালে তাঁরাও চলে আসবেন ।
সুন্দরবন জেলে-বাওয়ালি ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী, খালের পানি বাড়তে শুরু করায় ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় গতকাল থেকেই সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা নিরাপদে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন। বর্তমানে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ, কোবাদক, বানিয়াখালী, নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া তিন শতাধিক নৌকা ফিরেছে। এখনো গহীন সুন্দরবনে অনেক নৌকা আছে। সে সব নৌকার জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
কয়রার গোবরা এলাকার একজন জেলে বলেন, সন্ধ্যা থেকেই সুন্দরবনের মধ্যে নদীতে পানি ও ঢেউ বাড়তে শুরু করে। প্রথমে তাঁরা মনে করেছিলেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা, হয়তো কিছু সময় পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা স্বাভাবিক না হয়ে আরও বেশি হয়। সঙ্গে সঙ্গে বনের মধ্যে তীব্র গরম লাগতে থাকে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে টিকতে না পেরে তাঁরা জাল টেনে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালে আজ ভোরের জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় আড়াই ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি নদীতে ঢেউও বেড়েছে। জেলেরা সুন্দরবন থেকে ফিরে আসছেন। বন বিভাগও তাঁদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেছেন।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য বন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাঁদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারসহ শুকনো খাবার মজুতের জন্য প্রত্যেক টহল ফাঁড়ি ও অফিসকে বলা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মমিনুর রহমান প্রতিনিধিকে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। জোয়ারের পানিতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।এ অবস্থায় সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরা যেন নিরাপদে তীরে ফিরে আসেন, সে জন্য মৎস্যজীবী সমিতি ও জেলেদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।