মধুমতি এনজিও পারিবারিক সিন্ডিকেটে শত কোটি টাকার প্রতারণা
- আপডেট সময় : ০৭:২৯:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মে ২০২৩
- / ৫৫
মো: শাহাদাত হোসেন:
প্রতি লাখে ১২০০ টাকা লাভ দেওয়ার প্রলোভনে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মধুমতি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা বলছেন এই টাকার পরিমাণ শত কোটি টাকারও বেশি। মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত একটি এনজিও বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে এনজিওর টাকা নিয়ে গড়ে তোলেন বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান। নামকরণ করা হয় মধুমতি গ্রুপ।
জানা গেছে,এই চক্রের সবাই একই পরিবারের সদস্য। মধুমতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মাসুদ রানা,তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন প্রতিষ্ঠানটি চেয়ারম্যান এবং তার আপন ছোট ভাই ফারুক হোসেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। মাসুদ রানার আরো দুই ভাই আব্দুর রাকিব ও সানোয়ার হোসেনও এই প্রতিষ্ঠানে জড়িত। গত চার মাস আগে গোমস্তাপুর থানা পুলিশের হাতে বিভিন্ন অস্ত্র সহ আটক হয় প্রতিষ্ঠানটির এমডি মাসুদ রানা।
তারপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা পলাতক। ভুক্তভোগীরা গতকাল ( রবিবার) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও পরে প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এর আগে কয়েকজন ভুক্তভোগী গত শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাব সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বলেন ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে মধুমতি এনজিও। গ্রাহকের টাকায় আলিশান জীবন যাপন সহ নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের নামে বিভিন্ন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মাসুদ রানা। কিন্তু প্রয়োজনে তারা তাদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তাদের দাবি পাওনা টাকা আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে মধুমতি গ্রুপের এমডি মাসুদ রানা নাটক সাজিয়ে স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেপ্তারের দিন থেকে সব লেনদেন বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কেউ আদালতে মামলাও করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা। ২০১৩ সালের ৭ই মার্চ সমবায় অধিদপ্তর থেকে মধুমতি সমবায় সঞ্চয় ও উন্নয়ন লিমিটেড ও ২০১৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামের নিবন্ধন নেন। সেখানে প্রতি ১ লাখ টাকার বিপরীতে মাসে এক হাজার ২০০ টাকার লভ্যাংসের ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৬ টি শাখা খোলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের লভ্যাংশ কে পুঁজি করে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। পরে এনজিওর টাকায় ২৩ টি ট্রাক ও একটি প্রিন্টিং প্রেস একটি গরুর খামার ও একটি গাড়ল খামার ও লবণ মসলা ও ডিটারজেন্ট সহ বিভিন্ন পণ্যের বাজারজাত শুরু করেন।
প্রতারণার খবর জানতে মধুমতি এনজিও গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন পরিচালক ফারুক হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান বলেন, এম আর এর অনুমোদন ছাড়া কোন ক্ষুদ্র কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। মধুমতির বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আমরা তাদের সব সম্পদ পর্যালোচনা করে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।