বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অভিযোগ!
- আপডেট সময় : ০৬:১৮:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ মে ২০২৩
- / ৫২
আশরাফুল হক, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায বিয়ের তথ্য গোপন করে পোষ্যকোটায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদানের অভিযোগ উঠেছে (ডাকনাম) সাইফুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের শংকরটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন। চাকরিতে যোগদানের পর সাইফুলের বিয়ের ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ে। সাইফুলের বাবা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মানিক।
জানা যায়, ২০২২ইং সালে নিন্মমাধ্যমিক (প্রাইমারিতে) সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সেই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী শিক্ষকের পাশাপাশি পোষ্য কোটায় দরখাস্থ আহব্বান করা হয়। এতে শংকরটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মানিক এর ছোট ছেলে (ডাকনাম) সাইফুল ইসলাম পোষ্য কোটায় সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তির নিয়ম অনুসারে পোষ্য কোটায় আবেদনকারীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। তারপরেও চুড়ান্ত নিয়োগ পান সাইফুল ইসলাম।
কিন্তু সাইফুল ইসলাম চাকুরীতে আবেদন করার ৫ বছর পূর্বে বিয়ে করেছেন একই ইউনিয়নের হাজীগঞ্জ বাজারের পাশে অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়াকুব মোল্লার মেয়ে পাখি বেগমকে। দীর্ঘদিন ঘর সংসার করায় তার পরিবারে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। তার নামও রাখা হয় “ছোয়া মণি”। তার বয়স বর্তমান ৪ বছর। সাইফুল ইসলাম তার বিয়ের তথ্য সম্পূর্ণরুপে গোপন করে বিভিন্ন জায়গায় আর্থিক সুবিধা দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যোগদান করেছেন শংকরটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি ইতিমধ্যে বেতন ভাতাও পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে শংকরটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা বলেন, সাইফুল ইসলাম তার ডাক নাম কিন্তু তার সাটিফিকেটে অন্য নাম রয়েছে। শিক্ষা অফিস সব জানেন। সেখানে খবর নিলে জানতে পারবেন তার সাটিফিকেট নাম কি। তাছাড়া সাইফুল সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করার আগেই বিয়ে করেছেন। তার বিবাহের অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিতও ছিলাম। এলাকার লোক সবাই জানেন। তার একটি কন্যা সন্তানও আছে। সাইফুলের শ্বশুর বাড়ি হাজীগঞ্জ বাজারের পাশে। চাকরির সাথে মিলে রেখে টাকা বিনিময় কাজী অফিসে দু’ধরনের কাবিননামা করা হয়েছে। আর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে অবিবাহিত প্রত্যায়ন নিয়েছেন। সেই প্রত্যায়ন দেখিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন। শর্ত অনুযায়ী সে এ চাকরি করতে পারে না। এলাকায় তদন্ত করলে এ ঘটনার রহরহ প্রমাণ মিলবে।
সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, চাকুরী যেহেতু হয়েছে, এই ব্যাপারে আর কিছুই বলতে চাই না। আপনারা যা করতে চান করেন। কোন লাভ হবে না।
শংকরটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মানিক তার ছেলে সাইফুলের বিষয়ে বলেন, আমার ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম। সে ৫ বছর পূর্বে বিয়ে করেছে এটা সঠিক। কিন্তু বিয়ের কাবিন করা হয়েছে অনেক পড়ে। আমার ছেলের ঘরে ছোট একটি মেয়ে সন্তান আছে। ছেলের বিয়ে তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদানের বিষয় স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, অনেক কষ্টে চাকুরিটা যোগার করেছি। শিক্ষা অফিসও জানেন। আপনারা এটা নিয়ে লেখালেখি করিয়েন না। আমি আপনাদের জন্য মিষ্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
আদিতমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন পত্রের ওপর। পোষ্য কোটায় আবেদন করলে প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। কিন্তু বিয়ের তথ্য গোপন করে চাকুরীতে যোগদান করলে চাকুরী করার সুযোগ থাকবে না। এমনকি যোগদানের পর থেকে সমুদয় বেতন ভাতাও সরকারী কোষাগারে ফিতর দিতে হবে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় বলেন, তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদান করলে এবং তা প্রমানিত হলে, চাকুরী চলে যাবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ অনুসারে তথ্য গোপন করার কারণে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।