তীব্র লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বারহাট্টার জনজীবন
- আপডেট সময় : ০৭:২০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
- / ৫৬
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা জুরে প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিনে প্রখর রোদ ও রাতে ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানান যায়, সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৭ – ৮ বার লোডশেডিং হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় বর্তমানে রোজা চলাকালীন সময়ে সেহরির, ইফতার এমনকি তারাবী নামাজের সময়ও লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোজদার মুসল্লীরা।
নিম্ন আয়ের মানুষ লোডশেডিংয়ে পড়েছে আরও বেশি ভোগান্তিতে। তারা চার্জার ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও অটোচালকরা রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গাড়িতে চার্জ দিতে না পেরে রাস্তায় গাড়ি নামাতে পারছেন না তারা। এতে তাদের খুব কষ্টের মাঝে দিন কাটাতে হচ্ছে।
পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, উপজেলায় এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিডিউল থাকলেও এখন প্রতিদিন ছয়-সাত ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তার কোনো কিছুই মানছে না। তা ছাড়া যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে, তার সঙ্গেও লোডশেডিংয়ের কোন মিল নেই।
উপজেলার সদরের গোপালপুর এলাকার গ্রাহকরা জানান, পূর্বে প্রায়ই সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার লাইন সংস্কারের অজুহাতে সদর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকত। তারা মাইকিং করে বলত যে ৩৩ কেবি লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ এর কাজ চলছে। তাহলে এখন আবার প্রতিদিন ৫-৭ বার লোডশেডিং হচ্ছে কেন?
উপজেলার বাউসী ইউনিয়ন, চিরাম ইউনিয়ন, আসমা ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রহকরা বলছেন, গত তিন চারদিন ধরে আমাদের এলাকায় লোডশেডিং খুব বেশি হচ্ছে। আমরা পোল্ট্রি খামার ও গরুর খামার নিয়ে বিপাকে আছি। এভাবে লোডশেডিং চলছে থাকলে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পরতে হবে আমাদের মত ক্ষুদ্র খামারিদের।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের অভিযোগকেন্দ্রের ফোন নাম্বারে ফোন করলে অধিকাংশ সময় ফোন রিসিভ হয় না। আবার রিসিভ হলেও লাইনের সমস্য, নেত্রকোনা থেকে লাইন বন্ধ অথবা যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। তারা আরো বলেন, ‘আকাশে মেঘ দেখলেই অথবা সামান্য বাতাস হলেই উপজেলা জুড়ে শুরু হয়ে যায় লোডশেডিং। ফলে সরকারের উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সফলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বারহাট্টা উপজেলাবাসী।
বারহাট্টা পবিসের প্রকৌশলী বজলুর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় পবিসের ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুতের চাহিদা ৮ মেগাওয়াট। কিন্তু আমরা চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আবার অনেক সময় ৪০-৪৫ ভাগ পর্যন্ত পাচ্ছি। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’
উপজেলার পাড়া গড়মা গ্রামের স্কুল শিক্ষক চয়ন ঘোষ বলেন, ‘এ রকম নজিরবিহীন লোডশেডিং আগে কখনওই দেখিনি। লোডশেডিং আগেও হয়েছে। তবে, সে সময়ের বাস্তবতার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতার কোন মিল নেই। দিনের বেলার মতো এখন রাতেও বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে বাচ্চাদের পড়াতেও পারছি না।’
অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বারহাট্টা পবিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মামুনুর রশীদ বলেন, ‘উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু এখন চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। অনেক সময় অর্ধেকের কিছু বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য বাধ্য হয়েই ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’
কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবিসের ডিজিএম বলেন, ‘এটা জাতীয় সমস্যা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কবে হবে, এ বিষয়ে আমাদের কাছে নিদৃষ্ট কোনো তথ্য নেই।’
তিনি তাপদাহে, সেচ ও রমজানের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যাটা হচ্ছে। খুব দ্রুত এ সংকট কাটিয়ে উঠবে। সাময়িক সময়ের জন্য এ সংকট উত্তোলনে সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান।
এব্যাপারে বারহাট্টা পলীবিদ্যুৎ এর ইঞ্জিনিয়ার অর্ধেন্দুশেখর জানান, বারহাট্টা উপজেলায় তেমন লোডশেডিং নেই। কিন্তু গত তিন চার দিন ধরে উপজেলায় কিছু লোডশেডিং হচ্ছে। জামালপুরের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় শাট ডাউনে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে এই লোডশেডিং হচ্ছে। পাঁচ ছয় দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে এবং লোডশেডিং কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।